১৭ বছরেও শেষ হয়নি হুমায়ুন আজাদ হত্যার বিচার
১ মার্চ ২০২১ ১২:৩২
ঢাকা: লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার ১৭ বছর পার হলেও এখনো এর বিচার শেষ হয়নি। এতদিনেও বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার পরিবার।
এ বিষয়ে হুমায়ুন আজাদের ছোট ভাই মো. মঞ্জুর কবির জানান, ভাই হত্যার ১৭ বছর হয়ে গেল, কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার পাইনি। বিচারের জন্য আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। কঠিনভাবে তার অভাব অনুভব করি। তার অভাব তো পূরণ হবে না। ভাইকে হারিয়েছি, তাকে তো আর ফিরে পাব না। বরং ভাই হত্যার বিচার চাই। তবে আশা করব, প্রকৃত দোষীরা যেন সাজা পায়। যারা নির্দোষ তারা যেন সাজা না পায়। গত ৫ বছর আগে হত্যার শিকার ব্লগার অভিজিৎ, প্রকাশক দীপন হত্যার বিচার হলো। কিন্তু ১৭ বছরেও ভাই হত্যার বিচার পেলাম না!’
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিপুল দেবনাথ জানান, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের গাফিলতির কারণে মামলার বিচারে বিলম্ব হয়েছে। তবে হত্যা মামলাটি প্রায় শেষের পর্যায়ে। আশা করি, মার্চের শেষের দিকে মামলাটির রায় ঘোষণা হবে। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে। আশা করছি, তাদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে। অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায়ও সাক্ষীদের হাজির করে যত দ্রুত সম্ভব মামলাটির বিচার শেষ করব।’
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ জানান, ‘দীর্ঘদিনেও বিচার শেষ হয়নি। হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আশা করছি, আসামিরা খালাস পাবেন।’
জানা গেছে, ঢাকার ৪র্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাকছুদা পারভীনের আদালতে মামলা দুটি বিচারাধীন। গত ১৮ জানুয়ারি চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। আগামি ৪ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনগত বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ ধার্য রয়েছে। একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় আগামী ১২ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।
এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হন ড. হুমায়ুন আজাদ। হামলার সময় তাকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ওই হামলার পর হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন সিএমএইচে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ১২ আগস্ট মারা যান।
ওই ঘটনায় পরদিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। পরে তা হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। এছাড়া একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও অপর একটি মামলা হয়।
২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর এই মামলার বাদী মো. মঞ্জুর কবির মামলাটির বর্ধিত তদন্তের আবেদন করলে ওই বছরের ২০ অক্টোবর আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। বিভিন্ন সময় মামলাটি তদন্ত করেছেন রমনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান, সিআইডির পুলিশ ইন্সপেক্টর কাজী আব্দুল মালেক, মোস্তাফিজুর রহমান ও লুৎফর রহমান।
২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর আসামি আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ৫ দফায় বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত এ মামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল ওই মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ওই পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
এর আগে ২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটে আবুল আব্বাস ভূইয়া ও গোলাম মোস্তফা নামের দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যহতি দেওয়া হয়। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- জেএমবির সুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাউন, আনোয়ার আলম, হাফিজ মাহমুদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু।
আসামিদের মধ্যে সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু (পলাতক) এবং হাফিজ মাহমুদ মারা গেছেন।
সারাবাংলা/এআই/পিটিএম