এডিপি থেকে কমছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা, পুরোটাই বিদেশি তহবিলের
১ মার্চ ২০২১ ১৮:১৫
ঢাকা: চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের চার মাস বাকি থাকতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধনে এর আকার কমছে ৭ হাজার ৫০১ কোটি ৭৯ হাজার টাকা। তবে বরাদ্দের এই প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার পুরোটাই বৈদেশিক সহায়তার অংশ। এডিপি’তে সরকারি তহবিল থেকে যে অংশ রাখা হয়েছে, তার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। অন্যদিকে, সংশোধিত এডিপি’তে নতুন করে ১৭২টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর মূল এডিপি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ২৮টি প্রকল্প।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ হাজার টাকা। সংশোধনের পর সরকারি তহবিলের অংশ ঠিক থাকলেও বৈদেশিক সহায়তা কমিয়ে করা হচ্ছে ৬৩ হাজার কোটি টাকা। তাতে সংশোধিত এডিপি’র আকার দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকায়।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বলছে, আগামীকাল মঙ্গলবার (২ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এই এডিপি উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা।
এডিপি’র সংশোধনে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ না কমানোর বিষয়টিকে ইতিবাচক মনে করছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি পরিস্থিতি থেকে আমাদের দেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তারই প্রমাণ হচ্ছে সরকারি তহবিলের অর্থ কমছে না। আরও ভালো হতো যদি বৈদেশিক সহায়তা অংশের পুরোটাই খরচ করা যেত। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি তৈরি না হলে হয়তো মূল এডিপির যে বরাদ্দ, তার প্রায় পুরোটাই ব্যয় করা যেত।
সংশোধিত এডিপি’তে সর্বোচ্চ বরাদ্দ যেসব খাতে
সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া খাত হলো পরিবহন। এই খাতে ৪৯ হাজার ২১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব রয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে— ২৬ হাজার ৪৯১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। শিক্ষার প্রসারে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৫৭১ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম খাতে।
এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ২১ হাজার ৯৪৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা; গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে ও কর্মসংস্থান বাড়াতে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৮ হাজার ২৮৯ কোটি ৭০ হাজার টাকা; স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণ খাতে ১৪ হাজার ৯২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা; বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১১ হাজার ৫৭৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা; কৃষি খাতে ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা; পানিসম্পদ খাতে ৬ হাজার ৭০৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা; এবং শিল্প খাতে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের সংখ্যা
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৭৮৫টি। এর মধ্যে নতুন অনুমোদন পেয়েছে ১৭২টি প্রকল্প। অন্যদিকে মূল এডিপি থেকে বাদ পড়েছে ২৮টি প্রকল্প। এছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ১০১টি প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে আলাদা তালিকা হিসাবে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রোগ্রামিং কমিটির সভায় ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে ৪৮৯টি প্রকল্প বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত ১৩০টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।
পিপিপি প্রকল্প
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়নের জন্য ১০০টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট খাতের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে পিপিপি’র আওতায় বাস্তবায়নের ৭৯টি প্রকল্পের তালিকা সংশোধন করা হয়েছে।
সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্প
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে ৩৮১টি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল। ২০২০ সালের ১৯ মে অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এর মধ্যে ১৩৭টি প্রকল্প ২০২০-২১ অর্থবছরে শেষ করতে হবে। এর মধ্যে যেসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, তা বাদ দিয়ে বাকি প্রকল্পগুলোসহ ২০২০-২১ অর্থবছরের আরএডিপিতে ৪৪২টি প্রকল্প শেষ করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের জন্য মোট ২২ হাজার ৪৯৩ কোটি ১২ লাখ টাকা, প্রকল্প সাহায্যে ২ হাজার ১২০ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর