আ.লীগের অধীনে জাপা নির্বাচনে যাবে কি না, প্রেসিডিয়ামে সিদ্ধান্ত
২ মার্চ ২০২১ ১৮:৩১
ঢাকা: বর্তমান সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। এ অবস্থায় জাপা এই সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাবে কি না, সেটি নিয়েও দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। দলের পরবর্তী প্রেসিডিয়াম সভায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন মহাসচিব বাবলু।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংসদে বিরোধী দলে থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল জাপা। এর আগের সংসদেও ছিল একই পরিস্থিতি। শুধু তাই নয়, সেবার সরকারের মন্ত্রিসভাতেও জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-উপমন্ত্রী ছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, এবারে মন্ত্রিসভায় কোনো প্রতিনিধি না থাকলেও একাদশ সংসদের গত দুই বছরেও খুব একটা সরকারবিরোধী অবস্থানে দেখা যায়নি জাতীয় পার্টিকে। তবে মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন ইস্যুতে জাপা মহাসচিব সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জিতেছে, আর হেরেছে দেশের ভোটাররা। ভোট দিতে না পেরে ভোটাররা রাস্তায় কান্না করছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে উল্লেখ করে জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমরা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করব। মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে প্রয়োজনে প্রাণ দেবো, কিন্তু মাথা নত করব না। বর্তমান সরকারে অধীনে আর কোনো নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে কি না, তা আগামী প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু আরও বলেন, নির্বাচনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) মেশিনে শতভাগ ভোট পড়েছে। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ইভিএমকে আওয়ামী ইভিএমে পরিণত করা হয়েছে। ইভিএম নয়, ইভিএম পরিচালনায় জড়িতদের পবির্তন করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামীতন্ত্র আর গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না। জাতীয় পার্টি মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে রাজনীতি করছে। গণমানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনে জাতীয় পার্টি কখনো মাথা নত করবে না। প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করতে আমাদের সংগ্রাম চলবে। ভোটের নামে সন্ত্রাস হচ্ছে, নৈারাজ্য হচ্ছে, কেন্দ্র দখল হচ্ছে, মানুষের প্রাণহানী ঘটছে— এগুলো বন্ধে করতে হবে।
এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের নামে সন্ত্রাস, হানাহানি, খুনোখুনি বন্ধ করতে প্রয়োজনে ডিজিটাল গেজেটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করে দিতে বলেন বাবলু। তিনি বলেন, তাতে দেশ নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে।
সৈয়দপুরের পৌর নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে জাপা মহাসচিব বলেন, সৈয়দপুর পৌরসভা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অনুরোধ করেছি। তারা সবাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা।
নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চান কি না— সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের লাজ-লজ্জা থাকলে তাদেরই উচিত সিদ্ধান্ত নেওয়া।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে জাপা মহাসচিব বাবলু বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাসে মানুষ কথা বলতে পারে না। গণমাধ্যম প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে পারছে না। এছাড়া যে আইনে মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, সেই আইনের পরিবর্তন চাই আমরা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর