জুনের মধ্যেই কালুরঘাট সেতুর নকশা প্রণয়ন: সেতুমন্ত্রী
২ মার্চ ২০২১ ২০:১৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে বহুল প্রত্যাশিত বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতুর নকশা প্রণয়নের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট থেকে বোয়ালখালী রুটে বিআরটিসি’র বাস সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বিষয়টি জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করছে। চট্টগ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের বিপ্লব দৃশ্যমান হচ্ছে। চীনের সাংহাই নগরীর মতো ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলে গড়ে উঠছে বীরপ্রসবিনী চট্টগ্রাম। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম চার লেনের বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ এগিয়ে চলেছে। মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরেকটি মেরিন ড্রাইভ সড়ক করার পরিকল্পনা আছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেন এবং ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করব। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল স্থাপনের পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আছে। এই প্রক্রিয়া আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে পটিয়া বাইপাস সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। শাহ আমানত সেতু সড়ক চার ও ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মহাসড়কের কেরানীহাট, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়ায় ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে।’
বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতুকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘কালুরঘাটে সড়ক কাম রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। আগামী জুন মাসের মধ্যে এ সেতুর ডিজাইনের কাজ শেষ হবে।’
বোয়ালখালী উপজেলা সদরের সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ। উপস্থিত ছিলেন বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
উল্লেখ্য, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনা করার জন্য কর্ণফুলী নদীতে ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯৩০ সালে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স নামে একটি সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিজটি নির্মাণ করে। মূলত ট্রেন চলাচলের জন্য ৭০০ গজ লম্বা সেতুটি ১৯৩০ সালের ৪ জুন উদ্বোধন করা হয়। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আবারও বার্মা ফ্রন্টের যুদ্ধে মোটরযান চলাচলের জন্য ডেক বসানো হয়। দেশ বিভাগের পর ডেক তুলে ফেলা হয়।
পরে ১৯৫৮ সালে সবরকম যানবাহন চলাচলের যোগ্য করে ব্রিজটির বর্তমান রূপ দেওয়া হয়। বৃটিশ আমলে নির্মিত ব্রিজটির রয়েছে ২টি অ্যাব্যাটমেট, ৬টি ব্রিক পিলার, ১২টি স্টিল পিলার ও ১৯টি স্প্যান। জরাজীর্ণ সেতুটির বয়স এখন ৯১ বছর।
দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে ১ হাজার ১৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের মার্চে কাজ শুরু করে ২০২৩ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে একনেক বৈঠকে নকশায় ত্রুটি ধরা পড়ার পর কার্যত সেই উদ্যোগ পরিত্যক্ত হয়।
এ নিয়ে প্রয়াত সংসদ সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদল জীবদ্দশায় ২০১৯ সালে আন্দোলন শুরু করেন। এরপর সেতু নির্মাণের প্রাক প্রক্রিয়ায় কিছুটা গতি আসে। আরেকটি নকশা চূড়ান্ত হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএ সেই সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তুললে আবারও প্রক্রিয়া ঝুলে যায়। এখন নতুন করে আরেকটি নকশা প্রণয়ন হচ্ছে।
সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ