‘প্রতিটি দূতাবাসে শহিদ মিনার স্থাপন জরুরি’
৩ মার্চ ২০২১ ১৯:১০
একুশের চেতনা ছড়িয়ে দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতে শহিদ মিনার স্থাপন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্রুনাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাহিদা রহমান সুমনা।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সারাবাংলা.নেটের বিশেষ আয়োজন সারাবাংলা ফোকাসে অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সারাবাংলা ফোকাসে এ পর্বের আলোচনার বিষয় ছিল ‘বিশ্বায়নে শহিদ মিনার’। সঞ্চালনা করেন সারাবাংলা.নেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এম এ কে জিলানী।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও যুক্ত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মাদার ল্যাঙ্গুয়েজেস কনজারভেশন মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল ইনক-এর প্রতিষ্ঠাতা নির্মল পাল, কানাডার মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম এবং কানাডার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিস্তম্ভ বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহা. আলী বুখারি।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত নাহিদা রহমান সুমনা জানান, ব্রুনাইয়ে এবার প্রথমবারের মতো স্থায়ী শহিদ মিনার স্থাপন করে ২১শে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করা হয়েছে। এরকম প্রত্যেকটি দূতাবাসের উদ্যোগেই সেসব দেশে শহিদ মিনার স্থাপন করা যায় বলে মনে করেন তিনি। জানান, যেকোনো দেশেই শহিদ মিনার স্থাপন বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্তম্ভ স্থাপনের জন্য যোগাযোগ করা হলে হাইকমিশন থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়।
এছাড়া বিদেশে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে কারও যদি কোনো পরিকল্পনা থাকে, তাহলে দূতাবাসে যোগাযোগ করার আহবান জানান তিনি।
তবে বাংলাদেশে বাংলা ভাষা শুদ্ধভাবে বলা ও লেখার জন্য তরুণদের মাঝে সচেতনতা তৈরির ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন নাহিদা রহমান সুমনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে নিজেদের মাতৃভাষা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা হারিয়ে যাচ্ছে। তাই শুধু বিদেশে বসে মাতৃভাষার চর্চা না করে বাংলাদেশেও মাতৃভাষার শুদ্ধ চর্চা করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ প্রতিটি দেশে বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ সরকার এবং ইউনেস্কোর সমঝোতায় আসতে হবে বলে মনে করেন নির্মল পাল। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি দূতাবাস সব জায়গায় বাংলাকে নিয়ে কাজ করতে পারে বলে পরামর্শ তার।
নির্মল পাল বলেন, ‘সারাবিশ্বে যদি শহিদ মিনারের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে প্রত্যেক ভাষাভাষী সেটা দেখে নিজের ভাষা রক্ষার জন্য উজ্জ্বীবিত হবে। তাদের ভাষা সংরক্ষণেও এগিয়ে আসবে।’
এ বছর সিডনিতে আরেকটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একুশ এখন আর আমাদের মধ্যে নেই। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের একুশে অধিকার আছে। একুশের চেতনাকে সারাবিশ্বে যদি প্রচারিত, প্রসারিত করতে পারি, তাহলে একদিকে যেমন বাংলা সংস্কৃতির প্রসার হবে, অন্যদিকে অন্যান্য ভাষাভাষীরা অনুপ্রাণিত হবে।’
একুশের চেতনার মাধ্যমে বাংলাদেশের নেতৃত্বে সারাবিশ্বে স্থানীয় ভাষা রক্ষার জন্য কাজ করা যেতে পারে বলে মনে করেন নির্মল পাল। তাহলেই মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাকে রক্ষার পাশাপাশি সারাবিশ্বের মাতৃভাষা রক্ষা সম্ভব। সেইসঙ্গে একুশের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল কানাডার মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটির। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম সারাবাংলা ফোকাসে জানান, ব্রিটিশ কলম্বিয়া মডেল বা বিসি মডেলের কথা। ২০০৫ সাল থেকে এই মডেলের কাজ শুরু হয়।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এর মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে’কে কানাডার শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছি আমরা। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডেও এটি নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে।’ এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা পেলে বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে কানাডার টরন্টোতে শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠা করা হলেও শতভাগ পূর্ণতা পায়নি। ৩৭ সদস্যের সেই কমিটির দুজন সদস্যের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের কারণে বিতর্কের জন্ম নেয়। এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী বুখারি বলেন, ‘আমরা চাই না কয়েকজন বাঙালির মানি লন্ডারিংয়ের কারণে বাংলাদেশিদের ওপর কালিমা লেপন হোক। এটাকে আমরা প্রতিরোধ করতে চেয়েছি। সেজন্য গত বছর ফেব্রুয়ারিতে একটি আন্দোলনের সূচনা করেছিলোম। যেনো বাংলাদেশ সরকার সচেতন হয়।’
[প্রসঙ্গত: সারাবাংলা ফোকাস প্রতি শনি, সোম ও বুধবার সারাবাংলা.নেটের ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়]
সারাবাংলা/এসএসএস/এমআই
বিদেশে শহিদ মিনার বিশ্বায়নে শহিদ মিনার শহিদ মিনার সারাবাংলা ফোকাস হাইকমিশনার