ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে ২৬ মার্চ পর্যন্ত আল্টিমেটাম
৩ মার্চ ২০২১ ১৮:৩৩
ঢাকা: আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী।
বুধবার (৩ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা চলাকালীন শেরাটন ক্রসিংয়ে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পদযাত্রা শেষ করে এই আল্টিমেটাম দেন তিনি।
এর আগে কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন ও শাহবাগ মোড়ে তিন দফা পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে পদযাত্রা শেরাটন মোড়ে এসে ব্যারিকেডের সামনে থমকে যায়। এসময় ব্যারিকেডের ভেতর সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে পদযাত্রার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন- পুলিশি বাধায় শেষ হলো প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, ফারুক হাসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্রচিন্তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, সদস্য ও লেখক রাখাল রাহাসহ অন্যরা সেখানে অবস্থান করছিলেন।
ব্যারিকেডের ভেতর ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা করিনি। আমরা বলছি, বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছেন দাবায়ে রাখতে পারবা না, আমাদেরও দাবায়ে রাখতে পারবেন না। আমরা দেশে শৃঙ্খলা চাই, ন্যায়নীতি চাই।
এসময় পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার সন্তানও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে পড়তে পারে। আপনারা আপনাদের যথাযথ শ্রমের মর্যাদা পান না। আজ জনগণের পক্ষে আপনাদেরও থাকতে হবে। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না, আমরা জনগণের পক্ষে কথা বলতে চাই, আপনাদের কথা বলতে চাই, আমাদের কথা বলতে চাই। আপনাদের কাছে হয়তো নির্দেশ আছে, তাই এখানে আটকে দিয়েছেন। আমাদের সবাইকে যেতে না দিন, অন্তত ২০ জনের একটি দলকে যেতে দিন।
এ সময় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আজ পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনারা কি একবার চিন্তা করেছেন, কেন আজ মানুষ আপনাদের ঘৃণা করছে? পুলিশকে সরকার তাদের গোলাম বাহিনী বানিয়েছে। আপনারা জনগণের কাতারে এসে দাঁড়ান, জনগণের জন্য কাজ করুন। আমরা আপনাদের জন্য জীবন দেবো।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে আমাদের এই কর্মসূচি। আজ আমরা আপনাদের সঙ্গে মারামারি করব না। আমরা সেদিনই লড়াই করব যেদিন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে।
এসময় জোনায়েদ সাকি বলেন, এই পদযাত্রা আজ এখানে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বার্তা দিতে চাই— এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে নাগরিকদের মৌলিক বাকস্বাধীনতা যেভাবে হরণ করা হচ্ছে, যেভাবে এটি গদি রক্ষার নামে কাজে লাগানো হচ্ছে, তা সঠিক নয়। জামিন একটি আইনি অধিকার, আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, কার্টুন আঁকার দায়ে তারা জামিন পাচ্ছে না। আমরা পরিষ্কার বার্তা দিতে চাই— আমরা আজ পদযাত্রা করতে এসেছি, আজ আমাদের আটকেছেন, আমরা আজকে বাধা ভাঙছি না। ২৬ মার্চের মধ্যে যদি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল না হয়, আমরা তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করব। সেদিন আমরা ব্যারিকেড ভাঙব। ২৬ মার্চের মধ্যে এই আইন বাতিল করুন, না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।
এর আগে প্রেস ক্লাবের সামনে নাগরিক সমাবেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান বিশিষ্টজনরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন লিখিত বার্তায় এই দাবির সঙ্গে সংহতি জানান।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, , নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বেলা’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, লেখক ও প্রাবন্ধিক অরূপ রাহা, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল আলম ভুঁইয়াসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর