বেরোবির পরিস্থিতির জন্য দায়ী শিক্ষামন্ত্রী: কলিমউল্লাহ
৪ মার্চ ২০২১ ১২:৪৯
ঢাকা: বর্তমানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে দায়ী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
উপাচার্য কলিমউল্লাহ বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে আমি খুব খোলামেলাভাবে কথা বলব এবং দায়িত্ব নিয়ে বলব। আজকের এই পরিস্থিতি শিক্ষামন্ত্রীর আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং আস্কারায় হয়েছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আমরা যখন দেখা করতে যাই, উনার সকাল ১০টায় আসার কথা থাকলেও উনি এসে হাজির হন বিকাল ৪টায়। তার জন্য আমাদের পুরোটা দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এটি ছিল অসৌজন্যমূলক আচরণ। পরবর্তী সময়েও এই মনোভাব আমরা দেখেছি। যত বার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রোড়পত্রের জন্য উনার বাণী আমরা চেয়েছি, কোনোবারই তা পাইনি।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা উপমন্ত্রীর কাছ থেকে যতবারই আমরা বাণী চেয়েছি, তখনই পেয়েছি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি কখনো প্ররোচিত হননি, প্রধানমন্ত্রী কখনো প্ররোচিত হননি, কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা সবসময় অবজ্ঞা পেয়েছি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর যা ঘটেছে সবকিছু শিক্ষামন্ত্রীর আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ও আনুকূল্যে। তা না হলে এরকম ন্যাক্কারজনক একটি পরিস্থিতি তৈরি হত না। আমি কখনও সত্যি কথা বলতে দ্বিধা বোধ করিনি, পিছপা হইনি। আমার পরিণতি জেনেই আমি আজ কথা বলতে এসেছি।
কলিমউল্লাহ বলেন, আমাদের দেশে দুর্নীতি নিয়ে যে সমস্যাটা, সেটা হচ্ছে দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার একটা কালচার আছে। মধ্যবিত্তসুলভ একটি ছাপোষা আচরণ আমরা করে থাকি। একটা গুঞ্জন সৃষ্টি করার জন্য যেন সত্যি ঘটনা প্রকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনের একটি খণ্ডিত অংশ লিক করা হয়েছে। সেই লিক করা খণ্ডিত অংশ গণমাধ্যমে এসেছে। এটি দিয়ে মিডিয়াতে একটি গুঞ্জন সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক একটি রাজনৈতিক অপকৌশল।
বেরোবি উপাচার্য বলেন, আমি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সময়ও কাজ করেছি। তখন কিন্তু এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তথাকথিত সুরক্ষা পরিষদ নাম দিয়ে হাতগোনা ২০-২৫ জন লোক যারা শিক্ষামন্ত্রীর আস্কারায়, আশ্রয়ে- প্রশ্রয়ে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এটা একেবারেই অনাকাঙ্খিত। এই ধরনের অপরাজনীতি করা যায় না শিক্ষাঙ্গনে।
এটা কেন করা হয়েছে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হয়েছে কোনো কারণে তিনি আমায় ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করেন অথবা আমি যে ধারায় কাজ করি সেটা তার পছন্দ না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে আমি কারও তদবির একসেপ্ট করি না। বিষয়টা হচ্ছে কলঙ্কলেপন করা, যেটা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ হতে পারে না। এরকম মাইন্ডসেট নিয়ে পবিত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা ঠিক হচ্ছে না।
আপনি কি শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চাচ্ছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সেটি ভিসি হিসেবে চাইতে পারি না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আরেকটি বিষয়ে আমি বলতে চাই, আমি কুমিল্লা-চাঁদপুর অঞ্চলের মানুষ। সেখানে একটি রাজনীতি আছে। শিক্ষামন্ত্রী এখন যে আসনের সংসদ সদস্য সে আসনের সাবেক এমপি ছিলেন আমার নানা প্রয়াত মিজানুর রহমান চৌধুরী। চাঁদপুরের রাজনীতির বিষয়টি হয়ত এখানে প্রচ্ছন্নভাবে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমান অবস্থার বিষয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। আমি এখন পর্যন্ত যা করেছি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে করেছি।’
আপনার বিরুদ্ধে থাকা সব সমালোচনা ও অভিযোগ মাথায় নিয়ে আপনি পদত্যাগ করবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মেয়াদ আর সাড়ে ৩ মাস রয়েছে। এর মধ্যে পদত্যাগ করা আমার উচিত হবে না।
ইউজিসির তদন্ত কমিটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিতে আলমগীর হোসেন নামে একজন দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি সাবেক উপাচার্য নুরুন্নবী চৌধুরীর আত্মীয় এবং শিক্ষামন্ত্রীর এলাকার লোক। এছাড়া আরও যারা আছেন তারা নুরুন্নবী চৌধুরীর সময়ে চাকরি পেয়েছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উনার সরাসরি ছাত্র। এই কমিটি রংপুরে গিয়ে শুধুমাত্র এক ঘণ্টা খাওয়া দাওয়ায় ব্যয় করে কাউকে কোনকিছু জিজ্ঞাসা না করেই চলে আসেন।
এই বক্ত্যব্যের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা জানতে চান, এই তদন্ত কমিটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা না করে, ক্যাম্পাসের বাইরে আরডিআরএস ভবনে সাক্ষাৎ করেছেন- এই কথা কতটুকু সত্যি?
এসময় তিনি বলেন, হ্যাঁ এই কমিটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/এসএসএ