Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাজতিকে বৈদ্যুতিক শক: জেল সুপার-জেলারের বিরুদ্ধে মামলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ মার্চ ২০২১ ১৯:৩২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক হাজতিকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে জেল সুপার ও জেলারসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া নির্যাতনের শিকার হাজতির স্ত্রীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার পরিবারের নিরাপত্তা বিধানের বিষয়ে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না জানতে চেয়ে অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে ওই হাজতির স্ত্রী ঝর্ণা রাণী দেবী বাদি হয়ে পিটিশন মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আরজি মতে, নির্যাতনের শিকার রূপম কান্তি নাথ (৫০) চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী নাথপাড়ার মৃত দেবেন্দ্র লাল নাথের ছেলে। আর মামলায় আসামি করা হয়েছে রূপমের ব্যবসায়িক অংশীদার রতন ভট্টাচার্য এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার, জেলার ও কারা হাসপাতালে কর্তব্যরত সহকারী সার্জনকে। এছাড়া মামলায় আরও অজ্ঞাতনামা আসামির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন, ২০১৩ এর ৪ ধারার ১ (ক) উপধারায় পিটিশনটি আদালতে দাখিল করেছেন ভিকটিমের স্ত্রী, যা আদালত মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত করে ৪ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের কর্মকর্তা দীপেন দাশ গুপ্ত সারাবাংলাকে জানান, আদালত পিবিআইকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, তবে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিচের পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা এই মামলা তদন্ত করতে পারবেন না। এছাড়া অভিযোগের গুরুত্ব অনুযায়ী একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক দ্বারা ভিকটিমের শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে ভিকটিম অথবা তার মনোনীত প্রতিনিধি অথবা মামলার আবেদনকারী এবং আদালতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনতিবিলম্বে দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন, ২০১৩ এর ১১ ধারা অনুযায়ী মামলার আবেদনকারী ঝর্ণা রাণী দেবী ভিকটিম ও তার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়েও একটি পিটিশন আদালতে দাখিল করেন। আদালত সেটি গ্রহণ করে ওই আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে অভিযুক্ত জেল সুপার ও জেলারসহ চারজনকে শোকজ করেছেন এবং ১৪ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আবেদনকারী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা বিধানের আদেশও দিয়েছেন।

মামলার আরজিতে ঝর্ণা রাণী দেবী অভিযোগ করেছেন, রতন ভট্টাচার্যের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি মামলায় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কারাগারে যান রূপম কান্তি দেবনাথ। চলতি বছরের ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে রুপমকে অন্যায়ভাবে বিচারাধীন মামলায় জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য এবং স্থায়ীভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন করার জন্য শারীরিক নির্যাতন, বিষাক্ত নেশা জাতীয় দ্রব্য পুশ ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্যাতনের খবর পেয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রূপম কান্তি নাথের উন্নত চিকিৎসার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনটি মঞ্জুরও করেন। আসামিরা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে রূপমকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তিতে প্রথমে গড়িমসি করেন। তবে বর্তমানে তিনি চমেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।

একই ঘটনায় গত সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন জমা দিয়েছিলেন রূপমের স্ত্রী ঝর্ণা রাণী দেবী। উপযুক্ত আদালতে দাখিলের নির্দেশনা দিয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পরদিন আবেদনটি ফেরত দেন। এরপর বুধবার রূপম কান্তি নাথের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। তবে বৃহস্পতিবার ওই জামিননামা মামলার আরজির সঙ্গে আদালতে জমা না দেওয়ায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান জামিন বাতিল করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার জেল সুপার-জেলার টপ নিউজ বৈদ্যুতিক শক মামলা হাজতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর