করোনা নিয়ে গুজব ছড়ানোয় গ্রেফতার হয়েছিলেন মুশতাক: তথ্যমন্ত্রী
৬ মার্চ ২০২১ ১৮:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনা মহামারি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর কারণে লেখক মুশতাক আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শনিবার (৬ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এক আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী একথা জানিয়েছেন। ঐতিহাসিক সাত মার্চ উপলক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ও তাদের মিত্ররা মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর জন্য মায়াকান্না করছেন। তার মৃত্যুতে আমি নিজেও ব্যথিত। কিন্তু মুশতাক আহমেদকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছিল? তিনি করোনা মহামারি নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরণের পোস্ট দিচ্ছিলেন। একটি পেজ থেকে নানাভাবে গুজব ছড়াচ্ছিলেন। সেই কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জামিন কেন পাননি, সেটি আদালত বলতে পারবে। এই এখতিয়ার একমাত্র আদালতের আছে। তবে তার মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু, এটা তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন কোনো অর্জন হয়, আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলাম, তখন একটি পক্ষ লেগে গেল অন্য বিষয় নিয়ে মাঠ গরম করার জন্য। অথচ অর্জন নিয়ে কোনো অভিনন্দন তাদের মুখ থেকে আসেনি। এটি তাদের চিন্তার দৈন্যতা। দেশের অর্জন যে তাদের চোখে পড়ে না, কানে যায় না সেটিরই বহিঃপ্রকাশ।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রচুর অপপ্রচার হচ্ছে। এখন নেতাকর্মীদের উচিৎ সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনের প্রচার বেশি করা। বড় বড় স্লোগান আর ছবি তুলে ফেসবুকে দেওয়ার চেয়ে বেশি প্রয়োজন অপপ্রচারের জবাব দেওয়া। অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো, উন্নয়ন ও অর্জনের প্রচার করা বেশি দরকার। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের ভালো কাজের প্রচার ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার কর্মীদের মূল্যায়ন করব।’
বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে দেশ অনেক আগেই উন্নত হতো মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি উন্নত রাষ্ট্র রচনা করতে। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন আজ মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের আগেই বাংলাদেশ নাম লেখা হত উন্নত দেশের কাতারে। আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখাতে যাচ্ছে। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বছরে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। এটি আমাদের দেশের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবচেয়ে বড় অর্জন।’
বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি একটি নিরস্ত্র জাতি ছিল, বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের একটি ভাষণের মাধ্যমে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র বাঙালিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। সেই ভাষণ আজও যে কেউ শুনলে যেভাবে উদ্দীপ্ত হয়, বিশ্ব ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে লেখা হয়েছিল, চতুর শেখ মুজিব প্রকৃত অর্থে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য তাকে অভিযুক্তও করা যাচ্ছে না।’
সাত মার্চ পালনের ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপিকে অভিনন্দন জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এতদিন পরে তাদের বোধোদয় হল। মির্জা ফখরুল সাহেব এটিও বলেছেন সাতই মার্চ ইতিহাস, এই ইতিহাসকে আমাদের স্বীকার করতে হবে। আমি ফখরুল সাহেবদের বলবো বাকি যে ইতিহাস বিকৃতি করেছিলেন, সেই ভুল স্বীকার করে বাকি ইতিহাসগুলোও স্বীকার করে নেন। তাহলে জাতি আপনাদের সাধুবাদ দেবে।’
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মো. শামসুল হক, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমান, সহ সভাপতি অধ্যাপক মো. মঈন উদ্দিন, অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মঈন উদ্দিন রাশেদ, জসিম উদ্দিন, আফতাব উদ্দিন আহমেদ, স্বজন কুমার তালুকদার, আবদুল্লাহ আল বাকের ভুইঁয়া, উত্তর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
সারাবাংলা/আরডি/এমও