বাজার-বসতি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাচ্ছে ফৌজদারহাটবাসী
৬ মার্চ ২০২১ ১৯:২৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাটে সরকারি প্রকল্পের জন্য প্রায় দুইশ বছরের পুরনো একটি বাজার এবং ৬০ হাজার মানুষকে তাদের বসতি থেকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে ‘ফৌজদারহাটবাসী ও বাজার রক্ষা কমিটি’। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উচ্ছেদের প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবিতে ২০ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ফৌজদারহাটে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। দাবি বিবেচনা করা না হলে পরে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
শনিবার (৬ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন কমিটির আহ্বায়ক শ্রমিক নেতা মো. মছিউদ্দৌলা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ফৌজদারহাট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সম্মুখ লড়াইয়ের ঐতিহাসিক স্থান। পাকিস্তান আমল থেকে এ পর্যন্ত ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, রেলওয়ে, ছলিমপুর সিডিএ আবাসিক এলাকা, বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড, পোর্ট কানেকটিং রোড, ওয়ারলেস (টিঅ্যান্ডটি)- সাঙ্গু, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, পিডিবি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকার বারবার সেখানে ভূমি অধিগ্রহণ করেছে। এর ফলে ফৌজদারহাট মারাত্মক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।
এখন ফৌজদারহাটের ওই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রায় দুইশ বছরের পুরনো বাজার এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ৬০ হাজার মানুষের বসতি আছে। ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও ওই এলাকায় আছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির সদস্য সচিব মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘গত ২ ফেব্রুয়ারি সড়ক ও জনপথ বিভাগ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ড্রেনেজ নির্মাণের জন্য একটি উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছে। আবার পত্রিকান্তরে আমরা জানতে পেরেছি, ওজন স্কেল ও টার্মিনাল নির্মাণের জন্য উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে। উচ্ছেদের আওতায় পড়েছে আমাদের দুইশ বছরের পুরনো বাজার। ৬০ হাজার অধিবাসীর মধ্যে অধিকাংশের ভিটেবাড়ি, ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি উচ্ছেদের আওতায় পড়ছে। বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলাচলের পথও সংকুচিত হয়ে যাবে। দু’টি মসজিদও উচ্ছেদের নোটিশ পেয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির আহ্বায়ক মো. মছিউদ্দৌলা বলেন, ‘আমরা ফৌজদারহাটবাসাী সরকারের উন্নয়নের বিপক্ষে নয়, বরং সহযোগিতা করতে চাই। এজন্য আমরা উচ্ছেদ ও হুকুম দখলের বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে সড়ক ও পরিবহন সেতুমন্ত্রী, সীতাকুণ্ডের সাংসদ, জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা বলেছি, সরকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করুক, আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু কোনোভাবেই ফৌজদারহাটের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দা এবং ৬ হাজার শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে নয়। ফৌজদারহাট বাজার ও মসজিদ বিলীন হোক, এটা এলাকাবাসী হিসেবে আমরা চাই না।’
সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা বিকল্প প্রস্তারের মধ্যে আছে— একই উপজেলায় দু’টি স্কেল না করে সীতাকুণ্ডের বড় দারোগাহাটের বর্তমান ওজন স্কেলকে সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা; মহাসড়কে টোল রোড কিংবা ফৌজদারহাট স্টেশনের উত্তর পাশে কুমিরা ঘোড়ামারা পর্যন্ত জনশূন্য যেকোনো এলাকায় একটি ওজন স্কেল ও টার্মিনাল স্থাপন করা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ওজন স্কেল ও টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা স্থগিত করে ফৌজদারহাটবাসী ও বাজার রক্ষা কমিটিসহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে সেটি নির্মাণের জন্য বিকল্প স্থান নির্ধারণ করার দাবি জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
মছিউদ্দৌলা বলেন, ‘আমরা নিরুপায় হয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ২০ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় ফৌজদারহাবাসী ও বাজার রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে এলাকার বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক-কৃষক, শিক্ষার্থীসহ সব স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে আমরা মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করব। এরপরও যদি আমাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা না হয়, আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
সংবাদ সম্মেলনে সীতাকুণ্ড উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন সাবেরী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাব বিবি জলি এবং ফৌজদারহাটবাসী ও বাজার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মো. মোজাম্মেল হোসেন, কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আজম খান ও শামসুল আলম জয়নাল, উপদেষ্টা মো. রফিক সওদাগর, যুগ্ম, সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর সরওয়ার, ফৌজদারহাট কে এম হাই স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি কায়সারুল আলম ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর