Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫০ বছর পরও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়: রেজাউল করীম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ মার্চ ২০২১ ১৯:৪১

ঢাকা: স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। এ পরিস্থিতি থেকে দেশকে বাঁচাতে দুর্নীতিবাজদের বর্জন করে রাষ্ট্রে আলেম সমাজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সব দল ও সামাজিক সংগঠনকে বৃহত্তর স্বার্থে ইসলামের পক্ষে সম্পৃক্ত করার গুরুদায়িত্ব ওলামায়ে কেরামকে পালন করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৬ মার্চ) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশিন মিলনায়তনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে চরমোনাই কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, ‘বর্তমান সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। অতএব এ সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যায় না। ওলামায়ে কেরাম এখনো সচেতন না হলে স্পেনের পরিণতি বরণ করতে হবে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, ‘আমাদের সবাইকে হিংসা বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতা পরিহার করে উত্তম আখলাকের মাধ্যমে সবাইকে কাছে টানতে হবে।’

ইসলামী আন্দোলনের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আলেমদের জন্যে একটি সম্ভাবনার দুয়ার উম্মোচিত করেছে। ওলামায়ে কেরামের উচিত এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এই জনবান্ধব আন্দোলনটিকে সফলতার দিকে নিয়ে যাওয়া।’

বিজ্ঞাপন

সম্মেলন থেকে ১৫ দফা ঘোষণা করা হয়। সেগুলো হলো— দেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত মূলনীতি ‘সাম্য-মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা’ নিশ্চিত করতে দেশের শাসনতন্ত্র, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক মুল্যবোধকে ইসলামের আলোকে সাজিয়ে তুলতে সবাইকে যার যার স্থান থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; উম্মাহর খেলাফতবিহীন কাল আর দীর্ঘায়িত হতে দেওয়া যায় না। সেজন্য খেলাফত আলা মিন হাজিন নবুওয়াহ প্রতিষ্ঠায় উম্মাহর সবাইকে বিশেষত উলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধ বাস্তবমুখী কার্যক্রম শুরু করতে হবে; বিভিন্ন চিন্তাধারার উলামায়ে কেরামের মাঝে বিদ্যমান দূরত্ব কমিয়ে ঐক্য, সৌহার্দ্য ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে; ওলামা-মাশায়েখ-আইম্মাসহ সব ধর্মীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও অপপ্রচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে; দেশের সব মসজিদের খতিব ও ইমামদের প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার মর্যাদা ও মুয়াজ্জিনদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার মর্যাদা দিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে; দাওরায়ে হাদিস ও উচ্চতর মাদরাসাগুলোর শিক্ষকদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সমতুল্য মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে; দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিশুদের কুরআন মেখানোর জন্য একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারি নিয়োগ দিতে হবে।

১৫ দফা দাবির মধ্যে আরও আছে— দেশে যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল ও সম্মেলনে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও হয়রানি করা যাবে না। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে পুলিশ অনুমতির হয়রানিমূলক ও অপমানকর বাধ্যবাধকতা তুলে নিতে হবে; দেশের সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও মক্তব-মাদরাসার শিক্ষকদের চাকরিবিধি ও বেতন কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে; ১০. উলামায়ে কেরামের নামে থাকা সব ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; ইসলাম, আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অবমাননাকারীদের প্রতিহত করতে আইন প্রণয়ন করতে হবে। একইসঙ্গে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সংশোধন করে জনবান্ধব করতে হবে। এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে; কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করে তাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘুর মর্যাদা ও নিরাপত্তা দিতে হবে; অপসংস্কৃতি, মাদকাসক্তি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে ওলামায়ে কেরাম ও ইমামদের ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে; কোরআন-সুন্নাহ’র বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না বলে সংবিধানে ধারা স্থাপন করতে হবে; এবং দেশে সুশাসন, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন হাটহাজারী মাদরাসার শায়খুল হাদিস আল্লামা শেখ আহমদ চাটগামী, বগুড়া জামিল মাদারাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, বরিশাল খাজা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল হালিম, শিবচর জামিয়াতুস সুন্নাহর প্রিন্সিপাল মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল-ফরিদী, খুলনা দারুল উলুমের মুহতামিম মুফতি মুশতাক আহমদ, জামিয়া ইউনুছিয়ার মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী, চাঁদপুরের মাওলানা খাজা মাঈনুদ্দীন, খুলনার মুফতি গোলামুর রহমান, খুলনার মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ভাটারা জামিয়া সাঈদিয়ার মুহতামিম মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা কামাল উদ্দিন সিরাজসহ অন্যরা।

সম্মেলন ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। সম্মেলনে মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী সভাপতি ও মাওলানা গাজী আতাউর রহমান সাধারণ সম্পাদক পুনঃনির্বাচিত হন।

কমিটির অন্য নেতাদের মধ্যে সিনিয়র সহসভাপতি হয়েছেন মাওলানা আব্দুল হক আজাদ; সহসভাপতি হয়েছেন মুফতী ওমর ফারুক সন্ধিপী, আল্লামা খালিদ সাইফুল্লাহ, ড. মুশতাক আহমদ, ড. আফম খালিদ হোসাইন ও মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল-ফরিদী।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর