‘দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাবে সিপিবি’
৬ মার্চ ২০২১ ২০:৩৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সাহস ও দৃঢ়তা নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সংগ্রাম করে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী।
সিপিবির ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার (৬ মার্চ) বিকেলে নগরীর হাজারী লেইনে দলের জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
মৃণাল চৌধুরী বলেন, ‘বিগত শতাব্দির বিশের দশকে ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালে স্বতন্ত্রভাবে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি এবং একইসঙ্গে পার্টির পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে পৃথকভাবে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। স্বতন্ত্র ও স্বাধীন পার্টি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি কার্যক্রম শুরু করে।’
‘কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কমিউনিস্ট কর্মীদের ওপর হত্যা, নির্যাতন শুরু করে। হাজার হাজার কমিউনিস্টকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট রাজবন্দীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে ৭ জন কমরেড শহীদ হন। পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্টরা তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। তেভাগা, নানকার, টংকসহ নানা কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলনের পাশাপাশি ছাত্র ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগঠিত করেছেন কমিউনিস্টরা। ঐতিহ্যবাহী গণসংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠার পেছনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকাই মুখ্য’, বলেন মৃণাল চৌধুরী।
প্রবীণ এই বামনেতা আরও বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই, জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামাত-শিবির নিষিদ্ধের আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সিপিবিই অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার শাসনের নামে দুঃশাসন চালাচ্ছে। এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধেও সিপিবি সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছে এবং আগামীতেও করে যাবে।’
সভায় জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপির দ্বিদলীয় মেরুকরণের বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার কঠিন ও জটিল তৎপরতা সিপিবি অব্যাহত রেখেছে। বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের সকল কাঠামো ভেঙ্গে ফেলেছে। স্বাধীনভাবে মানুষ মত প্রকাশ করতে পারছে না। লেখক, কার্টুনিস্ট, সাংবাদিক, ছাত্রদের আজ ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার করে জেলে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। দেশ আজকে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদিকে ১ শতাংশ লুটেরা ধনিক শ্রেণি অন্যদিকে ৯৯ শতাংশ শ্রমিক-মেহনতি মানুষ। সিপিবি মেহনতি জনতাকে সঙ্গে নিয়ে লুটপাটকারিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্মুখভাগে আছে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে সিপিবি।’
সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল নবীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মো. মছিউদ্দৌলা, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, উত্তম চৌধুরী, নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, অমৃত বড়ুয়া, সদস্য রেখা চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্য, দিলীপ নাথ, রাহাত উল্লাহ জাহিদ, আবু তাহের, শওকত আলী, সেহাব উদ্দিন সাইফু ও শিমুল ধর।
সভা শেষে লাল পতাকার মিছিল নিয়ে সিপিবির নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘোরে।
সারাবাংলা/আরডি/এমও