‘বাঙালিকে দাবায়ে রাখা যায় না, সেই সত্য আজ উদ্ভাসিত’
৭ মার্চ ২০২১ ১৭:৫৫
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতিহাসকে এত সহজে মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনও দাবিয়ে রাখা যায় না। আর বাঙালিকে দাবায়ে রাখা যায় না, এটা তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বলে গেছেন ৭ মার্চের ভাষণে। সেই সত্য আজ উদ্ভাসিত হয়েছে।
রোববার (৭ মার্চ) বিকেলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ এই ভাষণ বিশ্ব স্বীকৃতি যেমন পেয়েছে, তেমনি জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় এই ভাষণটা অনুবাদ করা হয়েছে। প্রতিটি ভাষায় অনুবাদ করে এটি প্রচার করা হচ্ছে। ইউনেস্কো সেই পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের প্যারিসের যিনি রাষ্ট্রদূত, তিনি এটা জানিয়েছেন। যে ভাষণ বাংলাদেশে একদিন নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, আজকে জাতিসংঘে সেটা স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় এই ভাষণটা অনুবাদ করা হয়েছে। সারাবিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে ৭ই মার্চের ভাষণ।’
এসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পটভূমি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘একটি জাতির জন্য তিনি শুধু রণকৌশলেই দিয়ে যাননি তিনি, নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলতেন, যা কিছু হোক দেশ স্বাধীন হবেই। শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা হিসাবে না, যুদ্ধের রণকৌশলে তার এই বক্তৃতা কত যে কার্যকর এবং তার প্রতিটি পদক্ষেপ যে কত বাস্তবমুখী সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।’
লাখো শহীদ জীবন দিয়েছে, মা-বোনেরা নির্যাতিত হয়েছে, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি জাতির পিতার নির্দেশে যেসব নেতা যুদ্ধ পরিচালনা করে আমাদের বিজয় এনে দিয়েছেন তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট বাঙালির জীবনে একটা কালো অধ্যায় হিসাবে এসেছে। কারণ যারা পরাজিত হয়েছিল তারা বসে ছিল না। তারা সর্বক্ষণ ষড়যন্ত্রেই ব্যস্ত ছিল। তাই যখন একটা যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে তুলে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে জাতির পিতা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সময় ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটল। যেখানে পাকিস্তানি শাসকরা তাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে। ফাঁসির আদেশ দেয়া সত্ত্বেও ফাঁসি দিতে পারেনি। আর যে বাঙালির জন্য তিনি নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করেছেন, যে বাঙালির জন্য সারা জীবনের সব স্বাদ-আহ্বলাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন, দিনের পর দিন কারাগারের অন্তরালে নির্যাতন ভোগ করেছেন। যে বাঙালিকে আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিয়ে গেছেন। একটা রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন, একটা জাতি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। কি দুর্ভাগ্য যে তাদের হাতেই তাকে জীবন দিতে হলো। শুধু আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে ছিলাম।’
৭৫ এর পরে এই ভাষণটা নিষিদ্ধ ছিল। এ ভাষণ বাজানো যাবে না। দেওয়া যাবে না। অলিখিত একটা নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। ‘ইতিহাসকে এতো সহজে মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনও দাবিয়ে রাখা যায় না। আর বাঙালিকে দাবায়ে রাখা যায় না, এটা তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বলে গেছেন তার ৭ মার্চের ভাষণে। তাই দাবায়ে রাখতে পারে নাই। আজকে সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা। কৃতজ্ঞতা জানাই এই কারণে ১৯৮০ সাল থেকেই যে সংগ্রাম তারই সাফল্য আজ ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা দেখে যেতে পারলাম যে, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বাংলাদেশের মানুষও আজকে এটা শুনতে পাচ্ছে, জানতে পারছে, চর্চা করতে পারছে আর আগ্রহ বাড়ছে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এখানেই তো সব থেকে বড় সাফল্য।’ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব বলেও দৃঢ়তা ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদর্শন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আরও বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবু নাসের চৌধুরী। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বদরুল আরেফীন।
সারাবাংলা/এনআর/এমও
৭ মার্চ ৭ মার্চের ভাষণ জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব স্বীকৃতি