‘৭ মার্চেই স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষণা আসে’
৭ মার্চ ২০২১ ১৯:২১
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম বা যুদ্ধটা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হবে, সেটা কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ স্পষ্ট বলে গেছেন। ৭ মার্চেই স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষণা আসে। এর পর ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়ি থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে নির্দেশনা দিতেন সেভাবেই দেশ চলতো। দেশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তখন ওই বত্রিশ নম্বরে।
রোববার (৭ মার্চ) বিকেলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদযাপন উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যুক্ত ছিলেন। এ সময় তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ কিন্তু কোনো লিখিত ভাষণ ছিল না। তিনি সমগ্র জীবনের অভিজ্ঞতা এবং বাঙালি জাতিকে নিয়ে তার যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্য স্থির করেই ভাষণটি দিয়েছিলেন। আর এই পরামর্শটা আমার মা-ই দিয়েছিলেন। এরকম একটা ভাষণ দিতে যাচ্ছেন, কী কথা বলবেন- এ ব্যাপারে অনেকের অনেক পরামর্শ থাকে। বিশেষ করে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে বা আন্দোলনের সবসময় জড়িত ছিলাম বলেই অনেক কিছু আমার জানা ছিল। তখন আমাদের ছাত্রনেতাদের অনেকেই বিশেষকরে সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল সাহেবসহ আরও অনেক ছাত্রনেতা বত্রিশ নম্বরে এসেছে। সিরাজুল আলম খান বার বার চাপ দিচ্ছিলেন যে, ওইদিনই স্বাধীনতাটার ঘোষণা দিতে হবে। এমনকি আগের দিন সন্ধ্যায় এসে তারা একই কথা বলে যায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বুদ্ধিজীবীরা অনেক লিখিত পয়েন্ট দিয়ে যান। অনেক কিছুই তারা দিয়ে গেছেন। সিরাজুল আলম খান যখন বার বার স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া কথা বলছিলেন তখন সেখানে আব্দুর রাজ্জাক ও শেখ ফজলুল হক মনিসহ অনেকেই ছিলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু সিরাজুল আলম খানের উদ্দেশে বলেন, সিরাজ, লিডার সুড লিড দ্যা ল্যাড, ল্যাড সুট নট লিড দ্যা লিডার। কি করতে হবে আমি জানি, তোমরা তোমাদের কাজ করে যাও।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি সংগ্রাম ও আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটি পরিমিতিবোধ কিন্তু থাকতে হয়। ৭ই মার্চের ভাষণ যখন দিতে যাবেন, তখন আমার মায়ের একটাই পরামর্শ ছিল, সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছো তুমি, তোমার মনে যে কথা আছে, তুমি ঠিক সেই কথাটাই বলবে। কারও কথা শোনার তোমার প্রয়োজন নাই।’
তিনি বলেন, ‘এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার সব নির্দেশনা দিয়ে যান। তিনি এটা জানতেন, অফিসিয়ালি স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি হয়তো বেঁচে থাকতে নাও পারেন। সেজন্য তার এই ঐতিহাসিক ভাষণের ভিতরেই কিন্তু তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিয়ে গেলেন। তিনি বলে গেলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই ভাষণে কিন্তু তিনি দুই দুই বার এই কথাটি বলেছেন। আর শেষের বার সব থেকে বেশি জোর দিয়ে বলেছেন।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘৭ই মার্চেই তো প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। এই ঘোষণার পর থেকে পূর্ববঙ্গ কীভাবে চলবে, সেসব দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। ঐতিহাসিক ব্যাপার হলো, ওই ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর যে নির্দেশনা দিতেন, সেভাবেই দেশ চলত। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে, এমনকি ট্রেজারি চালানসহ সবকিছু বন্ধ ছিল। সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তখন ওই বত্রিশ নম্বরে।’
তিনি বলেন, ‘এমনকি ইয়াহিয়া খান যখন পূর্ববঙ্গে এসেছে তখন কোনো বাঙালি বার্বুচি খানায় কাজ করতে চাইনি। বাধ্য হয়ে তখন প্রেসিডেন্ট হাউজ থেকে ফোনে অনুরোধ করে, যেন ৩২ নম্বর থেকে বাবুর্চিদের কাজ করার কথা বলে দেওয়া হয়। আমি জানি না, পৃথিবীতে আর কোথাও এধরনের অসহযোগ আন্দোলন হয় কিনা। কিন্তু এই ভাষণে যে যে নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই এদেশের মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদর্শন করা হয়। এদিনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবু নাসের চৌধুরী। আর স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বদরুল আরেফীন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শেখ হাসিনা