সংক্রমণের ১ বছর— নমুনা পরীক্ষা-সংক্রমণ-মৃত্যুর তথ্য একনজরে
৭ মার্চ ২০২১ ২২:৫৪
ঢাকা: ৮ মার্চ ২০২০। দেশে প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয় দেশে। এরপর ২০২১ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত গুনে গুনে পেরিয়ে গেছে ৫২ সপ্তাহ এক দিন তথা ৩৬৫ দিন। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ ঢাকা থেকে ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে। শুরুর কিছুদিন সংক্রমণের হার ছিল বেশ কম। পরে তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। জুন-জুলাই নাগাদ সংক্রমণ শনাক্তের হার ও পরিমাণ সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। ওই সময় করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল বেশি। পরে সংক্রমণ শনাক্ত, সংক্রমণের হার ও মৃত্যু— কমতে থাকে সবগুলো সংখ্যাই।
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা ছিল, শীতে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা তাই নিতে বলেছিলেন বাড়তি সতর্কতা। তবে বাংলাদেশে শীতে সংক্রমণের হার কমতে থাকে। শুধু তাই নয়, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ডিসেম্বর থেকে দেশে শনাক্তের হার কমতে থাকে যেখানে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সর্বনিম্ন সংক্রমণের হার দেখা যায়।
২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি দেশে পর্যবেক্ষণমূলকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন ঘোষণা করার পরে এ দিন ২৬ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করায় মানুষের মাঝে মৃত্যুঝুঁকি কমে আসবে। তবে এটি কিন্তু সংক্রমণ কমাবে না। আর এ কারণে সতর্কতায় ঘাটতি দেখা দিলে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে কয়েকগুণ। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সবধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
করোনা সংক্রমণের ১ বছর
দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি শনাক্ত হন গত ৮ মার্চ। করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর ৫০তম দিনটি ছিল গত ২৬ এপ্রিল। ওইদিন পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৪১৬ জন, মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪৫। ১৫ জুন একশ দিনের মাথায় সংক্রমণ ছিল ৯০ হাজার ৬১৯ জন, মৃত্যু ছিল ১ হাজার ২০৯টি।
সংক্রমণের দেড়শ দিনের মাথায় (৪ আগস্ট) সংক্রমণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০ জনে। সেদিন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২৩৪ জন। এর ৫০ দিন পর ২৩ সেপ্টেম্বর সংক্রমণের ২০০ দিনের মাথায় সংক্রমণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৪ জনে, মৃত্যু ৫ হাজার ৪৪ জনে।
সংক্রমণের ২৫০তম দিন ছিল ১২ নভেম্বর। সেদিন পর্যন্ত শনাক্তের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন, মৃত্যু ৬ হাজার ১৪০ জন। নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি সংক্রমণের ৩০০ দিনে পাঁচ লাখ ১৪ হাজার ৪৯৯ জন শনাক্ত ও সাত হাজার ৬৫৬ জনের মৃত্যুর স্বাক্ষী হয় বাংলাদেশ। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ৩৫০ দিন ছিল ২০ ফেব্রুয়ারি। সেদিন পর্যন্ত দেশে শনাক্ত হয় পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৪২৪ জন, মৃত্যু আট হাজার ৩৪২ জন। ৭ মার্চ দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ৩৬৫তম দিন পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জনের মাঝে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই এক বছরে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হওয়ার পরে মারা যায় আট হাজার ৪৬২ জন।
নমুনা পরীক্ষার তথ্য
দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ২১ জানুয়ারি। তবে ৮ মার্চের আগে কেউ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হননি। ওই দিন নয়টি নমুনা পরীক্ষা করে তিনজনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর প্রথমবার ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা ১০০ অতিক্রম করে ২৬ মার্চ। ওই দিন ১২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দিনে হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা প্রথম করা হয় ১০ এপ্রিল। ওই দিন এক হাজার ১৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
নমুনা পরীক্ষা বাড়তে বাড়তে একদিনে পাঁচ হাজার পরীক্ষার ঘর স্পর্শ করে ১ মে। ওইদিন ৫ হাজার ৫৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। একদিনে ১০ হাজার পরীক্ষার ঘরও স্পর্শ হয় ওই মাসেই। ২০ মে ১০ হাজার ২০৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরপর ১০ জুন পরীক্ষা করা হয়েছিল সে পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৬৫টি নমুনা। আর গত ১৫ ডিসেম্বর এখন একদিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা করা হয়, সংখ্যা ১৯ হাজার ৫৪টি। ৩৬৫ দিন তথা ১ বছরে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা দাঁড়ায় ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ২০৫টি।
করোনা সংক্রমণ শনাক্ত সংক্রান্ত তথ্য
২০২০ সালের ২১ জানুয়ারিতে দেশে নমুনা পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরে প্রথমবারের মতো সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এর আগ পর্যন্ত ১১১টি নমুনা পরীক্ষা করা হলেও করোনা আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির দেখা মেলেনি। ৮ মার্চ জানা যায়, ইতালি ফেরত দুজন এবং তাদের একজনের পরিবারের আরেক সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।
এরপর ১৪ মার্চ পর্যন্ত দেশে আর কেউ শনাক্ত না হলেও ১৫ মার্চ শনাক্ত হন দুজন। ১৬ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত ১৪ দিনের মধ্যে আরও তিনদিন কোনো ব্যক্তি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হননি। এরপর আর কখনোই শূন্য সংক্রমণ দেখা যায়নি বাংলাদেশে। এর মধ্যে ৫ এপ্রিল শনাক্ত হন ১৮ জন। সেদিনই প্রথম দুই অংকে পৌঁছায় শনাক্তের সংখ্যা। ৯ এপ্রিল ১১২ জন শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো একদিনে সংক্রমণ শতকের ঘরে পৌঁছায়। ওই মাসেই ২৪ এপ্রিল তা ছাড়িয়ে যায় পাঁচশ’র ঘর।
একদিনে প্রথম হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয় ১১ মে (এক হাজার ৩৪ জন)। ওই মাসেই ২৮ মে সংক্রমণ ছাড়াই একদিনে দুই হাজারের ঘর (দুই হাজার ২৯ জন)। সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে তিন হাজারের ঘর স্পর্শ করে ৯ জুন। সেদিন তিন হাজার ১৭১ জন শনাক্ত হয়েছিলেন। সংক্রমণ চার হাজারের ঘরও ছাড়ায় জুন মানেই। ১৭ জুন চার হাজার আটজন শনাক্ত হয়েছিলেন দেশে। পরে ২ জুলাই একদিনে চার হাজার ১৯ জন করোনা পজিটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিলেন। একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড এটিই।
২০২০ সালের ১১ মে দৈনিক সংক্রমণ এক হাজারের ঘরে পৌঁছার পরে সেটি বাড়তে থাকে। ২৬ ডিসেম্বর এই সংখ্যা আবার এক হাজারের নিচে নেমে আসে (৮৩৪ জন)। ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশে ২৯১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা ২০২০ সালের মে মাসের পরে সর্বনিম্ম।
করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু
দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ জন। সেদিন একজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে। মৃত্যুর সংখ্যা ৫০-এর ঘর স্পর্শ করে ১৫ এপ্রিল। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০১ জন। এরপর মৃত্যুর সংখ্যা ৫০০ অতিক্রম করে ২৫ মে। আর ১০ জুন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়ে যায় হাজারের ঘর। এরপর ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ আগস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার, ৪ নভেম্বর ৬ হাজার ও ১২ ডিসেম্বর করোনা সংক্রমণ নিয়ে ৭ হাজার মৃত্যু পেরিয়ে যায় দেশে। ২৩ জানুয়ারি দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়ে যায়।
২০২০ সালের ৯ মে দেশে ৮ জন মারা যায় কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে। এর পরে দৈনিক হিসেবে মৃতের সংখ্যা ছিল ১০ এর অধিক। এর ২৫৫ দিন পরে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ৮ জন মারা যায় কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে। পরবর্তীতে অবশ্য এই সংখ্যা ৫ জনেও নেমে আসে একাধিকবার।
অন্যদিকে দেশে একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে প্রথমবারের মতো ১০ জন মারা যান ১৬ এপ্রিল। একদিনে মৃত্যুর সংখ্যা ২০-এর ঘর পেরিয়ে যায় ১৮ মে, সেদিন ২১ জন মারা গিয়েছিলেন। ৩০ মে পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৮। তবে ৩১ মে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা যান ৪০ জন। আর ১৬ জুন একদিনে মৃত্যু ৫০-এর ঘরও ছাড়িয়ে যায়। ৩০ জুন মৃত্যু পেরিয়ে যায় ৬০-এর ঘরও। সেদিন ৬৪ জন মারা গিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড এটিই।
মাসভিত্তিক সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা
২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পর এ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ১ হাজার ৬০২টি। তখন পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ৫১ জনের মধ্যে। এরপর এপ্রিলে সাত হাজার ৬১৬ জন, মে মাসে ৩৯ হাজার ৪৮৬ জন, জুন মাসে ৯৮ হাজার ৩৩০ জন, জুলাই মাসে ৯২ হাজার ১৭৮ জন, আগস্ট মাসে ৭৫ হাজার ৩৩৫ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৫০ হাজার ৪৮৩ জন, অক্টোবর মাসে ৪৪ হাজার ২০৫ জন, নভেম্বর মাসে ৫৭ হাজার ২৪৮ জন এবং ডিসেম্বর মাসে ৪৮ হাজার ৫৭৭ জন করোনা পজিটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হন।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২১ হাজার ৬২৯ জনের মাঝে। ফেব্রুয়ারি মাসে ১১ হাজার ৭৭ জন ও মার্চ মাসে এখন পর্যন্ত চার হাজার ১১৪ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত পাওয়া গেছে।
মাসভিত্তিক করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু
২০২০ সালের ১৮ মার্চ প্রথম করোনা নিয়ে মৃত্যুর পর ওই মাসে আরও চার জন মারা যান। এপ্রিলে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু হয় ১৬৩ জনের। মে মাসে ৪৮২ জন, জুনে এক হাজার ১৯৭ জন, জুলাইয়ে এক হাজার ২৬৪ জন, আগস্টে এক হাজার ১৭০ জন, সেপ্টেম্বরে ৯৭০ জন, অক্টোবরে ৬৭২ জন, নভেম্বরে ৭২১ জন এবং ডিসেম্বরে ৯১৫ জন মারা যান এই ভাইরাসের সংক্রমণে।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৫৬৮ জন ও ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮১ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। মার্চে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৫৪ জন। এখন পর্যন্ত দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটেছে জুলাই মাসে (১২৬৪ জন)।
মাসভিত্তিক করোনা সংক্রমণের হার
২০২০ সালের মার্চে করোনা নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এপ্রিলে সংক্রমণের হার ছিল ১২ দশমিক ১২ শতাংশ, মে মাসে ১৬ দশমিক ১৭ শতাংশ ও জুন মাসে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সংক্রমণের হার সর্বোচ্চে পৌঁছায় জুলাই মাসে। ওই মাসে সংক্রমণের হার ছিল ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এরপর আগস্ট মাসে সংক্রমণের হার ছিল কিছুটা কম— ২০ দশমিক ১৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে সংক্রমণের হার অনেকটা কমে এসে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৭০ শতাংশে। এরপর অক্টোবরে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, নভেম্বরে ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ ও ডিসেম্বরে সংক্রমণ ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে সংক্রমণের হার ছিল পাঁচ দশমিক ১০ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণের হার আরও কমে এসে হয় দুই দশমিক ৮২ শতাংশ। মার্চ মাসের প্রথম সাত দিনে সংক্রমণের হার চার দশমিক শূণ্য তিন শতাংশ।
২০২০ সালের মার্চ মাসের হিসাব বাদ দিলে এখন পর্যন্ত এই এক বছরে একমাসে সংক্রমণের হার সর্বনিম্ন হয় ফেব্রুয়ারি মাসে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
দেশে জাতীয়ভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মাসিক হিসেবে সংক্রমণের হার কমে এলেও গত এক সপ্তাহে কিছুটা বাড়তে থাকে। আর তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হলেও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে, হয়ে উঠতে পারে আরও বেশি প্রাণঘাতী। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে অনুসরণ করতে হবে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সংক্রমণের হার কমছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও এটি এখন বিপদসীমার নিচে। কিন্তু এ জন্য আমাদের রিল্যাক্স থাকার কোনো উপায় নেই। দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে আর এক্ষেত্রে সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা গেলে মৃত্যুঝুঁকি কমে আসবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়েও সরকার পরিকল্পনা করতে পারে। তবে সবাইকে সামনের দিনগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।’
চলমান পরিস্থিতিতে করোনা পরীক্ষা বাড়ানোর ওপরেও জোর দেন ডা. মুশতাক। তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো— আমাদের দেশের এখনো একটা বিশাল অংশ কিন্তু সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তকরণ পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তাই তাদের পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে উৎসাহী করতে হবে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসা সেবা বাড়াতে হবে, আইসোলেশন ও কোয়ারেনটাইনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে— শনাক্তের হার শতকরা পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে এলে সেটিকে স্থিতিশীল বা সহনীয় পর্যায় বলা যেতে পারে। আমাদের এখানে একটা দীর্ঘ সময় তেমন ভাবেই যাচ্ছে। সংক্রমণ হারও অনেক কম আছে। গত কিছুদিন বাড়লেও সেটি এখনো তুলনামূলকভাবে কম। তবে এখনো আমাদের রিল্যাক্স হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ বিশ্বের অনেক দেশেই কিন্তু এখন সংক্রমণ বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্র, কেরালাসহ আরও অনেক জায়গায় সংক্রমণ বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি আমাদের মেনে চলতেই হবে। যেকোনো ধরনের শিথিলতার সুযোগে কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।’
এ পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকে গুরুত্ব দেন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হলেও মাস্ক পরার প্রবণতা ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। অসুস্থ বোধ করলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটাও জরুরি, যেন প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা শুরু করা যায়।’
দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই এক বছরে আমরা সরকারকে যতগুলো পরামর্শ দিয়েছি তার অধিকাংশই কার্যকর হয়েছে। সংক্রমণ পরিস্থিতিও তাই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে। একইসঙ্গে দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে। সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমরা যদি সামনের দিনগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারি তবে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করছি।’
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম
একনজরে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা মৃত্যুর তথ্য সংক্রমণ সংক্রমণের ১ বছর