অধিকার আদায় করে নিতে হবে— নারীদেরকে শেখ হাসিনা
৮ মার্চ ২০২১ ১৪:৪৭
ঢাকা: শুধু চিৎকার করা, বক্তৃতা দেওয়া— এতে কিন্তু অধিকার আসে না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। আদায় করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১’ উদযাপনে শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই আমরা নারীদেরকে এই সুযোগটা সৃষ্টি করে দিয়েছি যেটা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তার ফসল বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি জানি না, তবে একটা কথা বলবো যে নারীদের অধিকার দাও, নারীদের অধিকার দাও বলে শুধু চিৎকার করা, বলা বক্তৃতা দেওয়া— এতে কিন্তু অধিকার আসে না। অধিকারটা আদায় করে নিতে হবে। আদায় করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সেই যোগ্যতা আসবে শিক্ষার মাধ্যমে।’
জাতির পিতা স্বাধীনতার পর আমাদের এই দেশে নারী শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা জানতেন আমাদের দেশের অনেকেই মেয়েদের শিক্ষার জন্য পয়সা খরচ করতে চাইবেন না। সেই জন্য মেয়েদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। আমরা এখন উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে শিক্ষা দিতে হবে। আমরা বলেছি যে প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যেন প্রশিক্ষণ নিতে পারে। যেকোনো কাজে যারা নিজেদের যোগ্যতা দেখাতে পারে এবং তারা কাজ করতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ১৯৯৬ সালে দেখেছি একটা মেয়ে কোনদিন ডিসির পদ পায়নি, এসপির পদ পায়নি বা উপজেলায় ইউএনও। কোথাও মেয়েদের কোনো স্থান ছিল না। এখন সব জায়গায় আছে। এসপি-ডিসি, ইউএনও-ওসি থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রেই মেয়েদের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি সমাজের অর্ধেক যদি অকেজো থাকে সে সমাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। আগে যেমন ধর্মের নাম নিয়ে বা সামাজিকতার কথা বলে মেয়েদের ঘরে বন্দি করে রাখার একটা প্রচেষ্টা ছিল, সেই অচলায়তন ভেদ করে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে।’
আজ আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তার পেছনে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অনেক অবদান রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমার বাবা সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। দিনের পর দিন তিনি কারাগারে ছিলেন। কিন্তু আমার মাকে দেখেছি তার পাশে থেকে কিভাবে সহযোগিতা করেছেন। শুধু তাই নয় তার নিজের জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। একজন নারী হিসেবে স্বামীর কাছে যে কোনো দাবি সেটাও ছিল না। বরং সম্পূর্ণ সংসারের দায়িত্ব আমার মা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। আমাদেরকে অর্থাৎ তার ছেলে-মেয়েকে মানুষ করার থেকে শুরু করে, যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জেলে থাকতেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে সমস্ত দলগুলোর কার্যক্রম দেখা, আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলা সবকিছুই তিনি কিন্তু করতেন। পর্দার আড়ালে থেকে তিনি করেছেন। কখনো তিনি কোনো প্রচার চাননি। আমার বাবাকে দেখেছি তিনি কিন্তু যথেষ্ট সম্মান দিতেন এবং গুরুত্ব দিতেন আমার মায়ের মতামতকে। যেকোনো একটা অর্জনের পেছনে একজন নারীর যে অবদান থাকে সেটাই সব থেকে বড় কথা।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম প্রথম গ্রহণ করেন একজন নারী বিবি খাদিজা; কাজেই আমি বলব আমাদের দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। আমাদের এই সমাজকে আমরা যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তাহলে সব থেকে প্রয়োজন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। মেয়েরাই পারে একমাত্র আদর্শ গৃহিণী হতে পারে। আদর্শ জননী হতে পারে। আদর্শ নারী হতে পারে।’
সারাবাংলা/এমও