Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কথিত স্বামীর হাতেই কুর্মিটোলার ইন্টার্ন চিকিৎসক খুন, ক্লু উদ্ধার

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ মার্চ ২০২১ ১৯:২৭

ঢাকা: রাজধানীর কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক সিরাজুম মনিরা সোমাকে (২৬) তার কথিত স্বামী ইমরান পুরো শরীরে পলিথিন পেঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। যদিও হত্যার পর ইমরান সকলকে জানিয়েছিল, সোমা আত্মহত্যা করেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যা রহস্য। এরইমধ্যে ইমরান (৭ মার্চ) আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে।

গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরের দিকে রাজধানীর খিলক্ষেতের আমতলীর অন্বেষা গলির ১৯২/৬/এ নম্বর বাসার চতুর্থ তলার একটি ফ্লাট থেকে সোমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম অনুযায়ী আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক এস এম রাকিবুল আজাদ ইমরানকে (২৭) নিয়ে থাকতেন বলে জানতে পারে পুলিশ। ওইদিন ইমরান পুলিশের কাছে বলেছিল, সোমা আত্মহত্যা করেছে। সে একটি চিরকুটও লিখে গেছে।

সোমার বাবা রাজশাহী থেকে ছুটে আসেন এবং খিলক্ষেত থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের ওপর ন্যস্ত হয়। ডিবি পুলিশ অনুসন্ধান করে জানতে পারে, ইমরানই সোমাকে হত্যা করেছে। পরে নিজেই চিরকুট লিখে মরদেহের পাশে রেখে দেয়। বাড়িওয়ালার কাছে কান্নাকাটি করে আত্মহত্যার নাটক সাজায়।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমা ও ইমরান দু’জনই চীনের নানচাং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারি পাস করে ২০১৭ সালে দেশে ফেরেন। চীনেই তাদের পরিচয় হয়। দুজনেই বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশনের জন্য চেষ্টা করেন। প্রথমবার অকৃতকার্য হলে সোমা ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। ওই সময় সোমা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তখন প্রায়ই সোমার সঙ্গে হাসপাতালে সাক্ষাত করে মানসিক শক্তি যোগাতেন। মুলত ওই সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর দুজনই বিএমডিসি পরীক্ষায় পাশের পর ২০২০ সালের মার্চ থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে খিলক্ষেতের ওই বাসায় থাকতে শুরু করেন। বাসার ভাড়ার পুরোটাই দিতেন সোমার বাবা।

বিজ্ঞাপন

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানায়, একই বাসায় থাকলেও একে অপরকে সন্দেহ করতো। সন্দেহের কারণে প্রায়ই ঝগড়া হতো দুজনের। অন্য কারও সঙ্গে একই ধরনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে- দুজনই দুজনকে সন্দেহ করতেন। এ নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি একটি পরীক্ষা দেওয়া ও যুক্তরাজ্যে যাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানায়, সোমা উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডন যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ইমরান তাকে বলতেন, সেখানে গিয়ে একই ধরনের সম্পর্কে জড়াবেন সোমা। সোমাও ইমরানকে বলতেন, ‘আমি লন্ডন চলে গেলে তুমিও তো দেশে আরেকজনের সঙ্গে সময় কাটাবে।’ ২৪ জানুয়ারি তাদের মধ্যে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে ইমরানকে চড় মারেন সোমা। এ সময় বাসায় থাকা কলা-রুটি তার মুখের ওপর ছুড়ে মারেন।

সোমার হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার পরই তাকে মূলত হত্যার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন ইমরান। ২৫ জানুয়ারি খিলক্ষেতের ওই বাসায় আলাদা রুমে ঘুমান তারা। ভোরে সোমার রুমের দরজা খুলে ইমরান দেখেন, তার কোনো সাড়াশব্দ নেই। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সোমা। তার পাশেই ঘুমের ওষুধের খালি পাতা। কয়েকদিন ধরে ঘুম হচ্ছিল না সে জন্য সোমা আগেই একটি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম না হলেই এটা করত সোমা। এই সুযোগে ইমরান পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় সোমার মাথা থেকে গলা পর্যন্ত ঢেকে কালো স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে ফেলেন। সোমার দুই হাতও স্কচটেপে প্যাঁচানো হয়, যাতে হাত দিয়ে মুখে প্যাঁচানো পলিথিন খুলতে না পারেন। এর পরই নিজেকে বাঁচাতে সোমার হাতের অক্ষরের সঙ্গে মিলিয়ে একটি সাজানো আত্মহত্যার চিরকুট লেখেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা লাশের সঙ্গে কাটানোর পর বেলা ১১টার দিকে বাড়ির মালিককে গিয়ে তার কথিত স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান।

গোয়েন্দাদের দাবি, সোমার মরদেহের পাশে পড়ে থাকা চিরকুটটি পরীক্ষা করা হয়। ওই চিরকুটে ইংরেজীতে লেখা ছিল, ‘বাই ডাক্তার সাহেব। আই এম গিভ আপ)।’ পরীক্ষায় দেখা যায়, কয়েকটি অক্ষর সোমার হাতের লেখার সঙ্গে মিলছে না। তখন ইমরানকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান জানায়, হত্যার পর চিরকুটটি সোমার হাতের লেখার সঙ্গে মিল রেখে নিজেই লিখে মরদেহের পাশে রেখেছিল।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (গুলশান বিভাগ) উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, সোমা ও ইমরান দুজনই একই হাসপাতালে ইন্টার্ন করছিলেন। কথিত স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা থাকতেন। একদিকে অবৈধভাবে বাস করার কারণে তাদের মধ্যে সমস্যা সমাধানে তারা কারও সহযোগিতা নিতে পারেনি। অন্যদিকে ঝগড়ার কারণে জীবনের জটিলতা তৈরি হওয়ায় ইমরান পরিকল্পিতভাবে সোমাকে হত্যা করে। হত্যার পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে ইমরান। খুব শিগগির আমরা চার্জশিট জমা দিতে পারব।

ইমরানের পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ইমরানের বাড়ি কুষ্টিয়া সদরে। তার বাবা কুয়েতে থাকেন।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

ইন্টার্ন চিকিৎসক টপ নিউজ সোমা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর