এমপিদের ‘মাইম্যান’ খবরদারিতে তৃণমূল চাঙ্গায় বাধাগ্রস্ত আ.লীগ
৯ মার্চ ২০২১ ১১:২০
ঢাকা: ভবিষ্যতের বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাংগঠনিকভাবে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য সম্মেলনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের পথে হাঁটছে একযুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটি। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনাও এমনই। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ার পক্ষে নন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও দলীয় সংসদ সদস্যরা।
স্থানীয়রা বলছেন, নিজের অনুসারীদের জায়গা দিতে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এতে তৃণমূলকে ঢেলে সাজানোর সাংগঠনিক লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, দুঃসময়-দুর্দিনের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। নেত্রী চান গ্রহণযোগ্য পরীক্ষিতরা নেতৃত্বে আসুক।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও দলীয় সংসদ সদস্যরা পছন্দের লোকদের দিয়ে প্রভাব বলয় ধরে রাখতে চান। তারা পছন্দের অনুসারীদের কমিটির মূল নেতৃত্বে আনতে চান। উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে সম্মেলন করতে চাইলে কিছু কিছু এলাকার এমপি ‘ভাগ’ দেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন।
একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৃণমূলের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, দখলবাজ, মাদক ব্যবসায়ীসহ যারা মাইম্যান, তারা যেন নেতৃত্বে আসতে না পারেন, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিভাগীয় আট সাংগঠনিক টিমের নেতারা এ নির্দেশনা মেনে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ভাগ-বাটোয়ারার কোনো সুযোগ নেই। যে যোগ্য হবেন, তিনিই নেতা নির্বাচিত হবেন। তিনি কোন ভাগের, কোন এমপির কাছের লোক— এসব বিষয় দেখার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের নেত্রী (দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা) যেভাবে দলকে দেখতে চান, দলটিকে সেভাবেই ঢেলে সাজানো উচিত। এর ব্যত্যয় না ঘটানো সবার জন্যই ভালো।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে আটকে থাকা তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সাংগঠনিক এলাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশনা দেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যেসব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেসব ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। পৌরসভা নির্বাচনের পরেই শুরু হবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। সবাইকে এখন থেকেই সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা মেনেই তৃণমূলকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দলের কিছু উপজেলা বা পৌরসভা পর্যায়ে সম্মেলন হয়েছে, যেগুলোতে এর আগে সম্মেলন হয়েছে একযুগেরও বেশি সময় আগে। তবে অনেক এলাকাতেই সম্মেলন করতে গিয়ে স্থানীয় ‘প্রভাবশালী’ নেতা বা এমপিদের কাছ থেকে সহযোগিতার পরিবর্তে মিলছে প্রতিবন্ধকতা।
এ পরিস্থিতিতেও কোনো ধরনের ছাড় না দিয়ে সম্মেলন শেষ করার কাজ এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, অনেকের কাছেই ত্যাগী নেতাকর্মী পছন্দের না। তারা নিজস্ব লোক চায়। কিন্তু সেটি তো হতে দেওয়া যাবে না।
এস এম কামাল তার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজশাহী বিভাগের দুইটি উপজেলার নাম উল্লেখ করে বলেন, আলোচনার ক্ষেত্রেও যারা আলোচনায় বসেন, তারা ত্যাগীদের চাইতে নিজস্ব লোকদের প্রতি গুরুত্ব দেন। আর আমাদের পক্ষে তো কাউন্সিলরদের মতামত নেওয়া সম্ভব হয় না। আমি মনে করি, আলোচনা করে করা ভালো। কিন্তু আলোচনা করতে হলে তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের বায়োডাটা দেখে যারা দুঃসময়ের আওয়ামী লীগ কর্মী, যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে— তাদের নেতা বানানো জরুরি। সেক্ষেত্রে অনেক সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে মতের অমিল হয়। এ কারণে কিছু কিছু জায়গায় কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না।
এস এম কামাল আরও বলেন, অনেক এমপি ও স্থানীয় নেতারা সম্মেলন করার বিষয়ে অনীহা দেখান। কারণ ভোট হলে সবসময় পছন্দের লোককে নেতৃত্বে তুলে আনা সম্ভব হয় না। তবে এ পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল গোছানোর কাজ শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে নেত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী ‘মাইম্যান’দের বাদ দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কাউন্সিল করা হবে।
সারাবাংলা/এনআর/এএম