সময় শেষ, কাজ শেষ হয়নি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের
৯ মার্চ ২০২১ ১১:৫৮
সুনামগঞ্জ: হাওরের ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের দ্বিতীয় দফার সময়সীমা গত রোববার শেষ হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যেও জগন্নাথপুরের কোনো হাওরের একটি প্রকল্পেও শতভাগ কাজ শেষ হয়নি। ফলে ফসল নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এদিকে বাঁধের কাজ নিয়ে স্থানীয় পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ড) লুকোচুরি চলছে। তাদের দাবি হাওরের শতভাগ মাটি ভরাটের কাজ এক সপ্তাহ আগেই সমাপ্তি হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, জগন্নাথপুরের সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওরের কয়েকটি প্রকল্পের কিছু স্থানে এখনো মাটি পড়েনি। তবে শ্রমিকরা কাজ করছে। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, নলুয়ার হাওরে পোল্ডার-১ এর আওতাধীন ৯ নম্বর প্রকল্পের সালিকা এলাকায় কিছু স্থানে মাটি পড়েনি। অনুরূপভাবে ১০ নম্বর প্রকল্পের ডুমাখালি এলাকার এখনো মাটি কাঁটার কাজ শেষ হয়নি। ওই হাওরের ১২ নম্বর প্রকল্পের মাটির কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। এছাড়া ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ নম্বরসহ অধিকাংশ প্রকল্পের স্লোপ ও কম্পেকশন হয়নি।
অধিকাংশ প্রকল্পের সভাপতি জানিয়েছেন, অর্থ সংকটে তারা কাজ শেষ করতে পারছেন না। তবুও প্রাণপণ চেষ্টা করছেন কাজ দ্রুত সমাপ্তি করতে।
১৩ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি আবুল কাশেম জানান, আমার প্রকল্পে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমি প্রায় ১২ লাখ টাকার কাজ শেষ করেছি। সরকার থেকে দুই দফায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মতো পাওয়া গেছে। ধারকর্য করে কাজ করছি। অর্থ সংকটে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করা যায়নি।
১০ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সুজাত মিয়া বলেন, সামান্য স্থানে মাটি ভরাটের কাজ বাকি রয়েছে। তবে কাজ চলছে। আশা করছি একদিনের মধ্যেই শেষ হবে।
তিনিও বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় টাকা কম পাওয়ায় ১৮ দিন ধরে শ্রমিকদের কাজের টাকা পরিশোধ করতে পারিনি।
নলুয়া হাওর পাড়ের কৃষক ভুরাখালি গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, হাওরের বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এজন্যে হাওরের ফসল নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।
তিনি আরও বলেন, নলুয়া হাওরের ফসল বাংলাদেশের একদিনের খাবার যোগান দিতে পারে। গত বছরে তিনদফা বন্যার সময় কৃষকের ঘরের প্রধান শক্তি ছিল গোলাভরা ধান। তাই হাওর রক্ষায় দ্রুত বাঁধগুলো গুরুত্ব দিয়ে মেরামত কাজ শেষ করা অতি জরুরি।
নলুয়া হাওর বেষ্টিত চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরজ মিয়া বলেন, বেড়িবাঁধ প্রকল্পের কাজে আগ্রহ কমে যাচ্ছে কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের। এর প্রধান কারণ শতভাগ কাজ শেষ করেও সময় মতো টাকা না পাওয়া। চলতি বছরেও বাঁধের কাজে টাকার সমস্যার জন্য নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, জগন্নাপুরে এবার ৩৭টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠনের মাধ্যমে ৭৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। কাজের বরাদ্দ পাওয়া গেছে তিন কোটি ৮৫ লাখ টাকা। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধের কাজ শুরু হয়। নীতিমালা অনুয়ায়ী আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজের শেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও সাতদিন অর্থাৎ ৭ মার্চ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জগন্নাথপুর উপজেলার মাঠ কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী বলেন, সামান্য কিছু স্থানে মাটির কাজ বাকি রয়েছে। হাওরের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে আরও ১৫ দিন সময় বাড়নোর হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বরাদ্দ কম পাওয়ায় পিআইসিদের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা কম দেওয়া হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, আমরা প্রতিদিন বেড়িবাঁধের কাজ পরিদর্শন করে কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করছি। আশা করছি, দ্রুত কাজ শেষ হবে।
সারাবাংলা/এএইচ/এনএস