মেট্রোরেলের অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ, এপ্রিলে আসছে ট্রেন
৯ মার্চ ২০২১ ১৪:৫৯
ঢাকা: স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন বর্ষের ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৮.৭২ শতাংশ। আগামী এপ্রিলে মেট্রো ট্রেনের প্রথম সেট দেশ পৌঁছাবে।
গত ৪ মার্চ বিকালে জাপানের কোবে বন্দর থেকে ‘এসপিএম ব্যাংকক জেনারেল কার্গো’যোগে প্রথম মেট্রো ট্রেন সেট বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। উত্তরার ডিপোতে এই ট্রেনসেটের পৌঁছানোর সম্ভাব্য তারিখ আগামী ২৩ এপ্রিল।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) ডিএমটিসিএল মেট্রোরেল-৬ এর সর্বশেষ অগ্রগতি প্রকাশ করে। প্রকাশিত অগ্রগতিতে এসব তথ্য জানা গেছে। মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
ডিএমটিসিএল জানায়, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৫৮.৭২ শতাংশ। এরইমধ্যে ২০.১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩.২৭৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। ডিপোর অভ্যন্তরে ১৬.৯০ কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া ভায়াডাক্টের ওপরে ১০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক প্লিন্থ কাস্টিং শেষ হয়েছে, রোড কাম রেইল ভেহিক্যাল ব্যবহার করে ডিপোর অভ্যন্তরে এবং ভায়াডাক্টের ওপরে ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে।
ইতোমধ্যে মধ্যে ডিপোর অভ্যন্তরে ৬ কিলোমিটার ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮১.৪২ শতাংশ, দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৫৪.৬১ শতাংশ। আর একটি বছর ঘুরলেই ট্র্যাকে চলবে স্বপ্নের মেট্রোরেল।
ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ। সম্প্রতি ডিএমটিসিএল এর আওতায় বাস্তবায়নাধীন এমআরটি লাইন-৬ এ কর্মরত ৬ জন বিদেশি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত (৮ মার্চ ২০২১) মোট মোট্রোরেল সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ৩৪৩ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কোনো মৃত্যু নেই।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে ঢাকায় মেট্রোরেল চলবে কি, এমন প্রশ্নের জবাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সচিব এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। জাপান থেকে ঢাকার পথে মেট্রোরেল। ঢাকায় মেট্রোরেলের কোচ এলেই পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো। দিনরাত কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।’
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে। উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ কাজ সমাপ্ত। উত্তরা উত্তর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। উত্তরা উত্তর ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে স্টিল স্ট্রাকচার ইরেকশন কাজ চলমান। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণ কাজ চলমান। মেট্রোরেল নির্মাণে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা বিবেচনায় পাঁচটি লং স্প্যান ব্যালান্স ক্যান্টিলিভারের মধ্যে তিনটি সমাপ্ত হয়েছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন বর্ষ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এ ট্রেন। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
সারাবাংলা/জেজে/এমও