‘মৈত্রী সেতু নেপাল-ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যকেও সহজ করবে’
৯ মার্চ ২০২১ ১৬:৩৯
ঢাকা: ফেনী নদীর ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু ভারত নয়, এই সেতু নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও দেশের বাণিজ্যকে আরও সহজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি— এই সেতু আমাদের দুই দেশের মধ্যে কেবল সেতুবন্ধনই রচনা করবে না, বরং ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয়, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ত্রিপুরাবাসী ব্যবহার করতে পারবে।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথভাবে মৈত্রী সেতুর ভার্চুয়াল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১০ সালের ত্রিপুরার তখনকার মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ফেনী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার প্রস্তাব রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জন্য এই সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনুরোধটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করি। তারপর থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় পক্ষকে সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করে আসছে।
১০ বছর পর আজ এই সেতু একটি বাস্তবতা।
ফেনী সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বের ‘ল্যান্ডলকড’ রাজ্যগুলো বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এর আগে, আগরতলার নিকটতম সমুদ্রবন্দর ছিল ১৬০০ কিলোমিটার দূরের কলকাতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলার নিকটতম সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব একশ কিলোমিটারেরও কম হবে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় ফেনী নদীর ওপর নির্মিত এই মৈত্রী সেতু উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি লাইফলাইন হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পণ্য পরিবহনের জন্য এরই মধ্যে ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি বাংলাদেশ দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারতকে কানেক্টিভিটি দেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন যুগের সূচনা করেছে। আমরা এমন একটি অঞ্চলে আছি যেখানে কানেক্টিভিটি চালুর বিষয়ে রক্ষণশীল ছিল এবং যেখানে সম্ভাবনার চেয়ে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য অনেক কম। আমি বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতাগুলো ব্যবসার ক্ষেত্রে ভৌত বাধা হওয়া উচিত নয়।
বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃসীমান্ত পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি— ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি আঞ্চলিক ব্যবসা বাণিজ্য বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি এই সেতু ত্রিপুরা ও ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করি, মৈত্রী সেতু এর আশপাশের এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের জীবন-জীবিকার উন্নতিতে অবদান রাখবে।
ভৌগলিক অবস্থানের পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির গতিপথ বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রতিবেশী করে তুলেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক পোশাক শিল্পের অন্যতম নেতা হিসেবে আমরা আমাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র পথ তৈরি করেছি। বাংলাদেশ এখন দেশি-বিদেশী বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে কানেক্টিভিটির কেন্দ্র হিসেবে এর অবস্থানগত সুবিধা সর্বাধিক করতে প্রস্তুত।
মৈত্রী সেতুর সফল ব্যবহার প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মৈত্রী সেতু এমন এক সময়ে উদ্বোধন করছি যখন আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বর্ষ উদযাপন করছি। ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়ে ভারত আমাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। আজ আমরা এর সঙ্গে সমৃদ্ধ অঞ্চল তৈরি করছি।
ত্রিপুরাবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ভুলি নাই ১৯৭১ সালে কিভাবে আমাদের জনগণকে আপনার আশ্রয় দিয়েছিলেন, সমর্থন করেছিলেন, সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন করেছিলাম। কাজেই আজ আমি সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী (ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব), আপনাকেও আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবও বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর