করোনার ১ বছর: আক্রান্ত ১৬ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, একজনের মৃত্যু
১০ মার্চ ২০২১ ১২:৩১
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর পেরিয়ে গেছে একটি বছর। এই এক বছরে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন আট হাজার ৪৬২ জন এবং সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে সর্বমোট ৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জনের মাঝে। এর মাঝে আক্রান্ত হয়েছেন দেশের চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যম কর্মী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরাও।
সরকারের বর্তমান মন্ত্রিসভার ১৬ জন সদস্যের মাঝে এই বছরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। জুন মাসে মন্ত্রিসভার প্রথম সদস্য হিসেবে করোনা আক্রান্ত হন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। ওই মাসেই ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার পরে নমুনা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
জুন
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং: ৮ মার্চ দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের পরে জুন মাসে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মাঝে সর্বপ্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের মাঝে। ২০২০ সালের ৬ জুন কক্সবাজার ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে তার মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত নিশ্চিত হওয়া যায়। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
৭ জুন উন্নত চিকিৎসার জন্য বীর বাহাদুর উশৈসিংকে বান্দরবান থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আনা হয়। ২৪ জুন কোভিড-১৯ সংক্রমণ মুক্ত হন বীর বাহাদুর উশৈসিং।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ: ১৩ জুন রাত ১০টার দিকে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে। রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে সেখানে তিনি মারা যান। শ্বাসকষ্ট থাকায় মৃত্যু পরবর্তী সময়ে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ পরীক্ষায় ১৪ জুন সকালে তার করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি: ২০২০ সালের ১৭ জুন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। রাজধানী এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন টিপু মুনশি কোভিড-১৯ সংক্রমণ মুক্ত হয়ে ওঠেন ২৭ জুন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক: ২০২০ সালের ১১ জুন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও তার স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু করোনা উপসর্গ নিয়ে নমুনা পরীক্ষা করান। ১২ জুন তাদের দুজনের করোনা ধরা পড়ে। ১৩ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মন্ত্রী ও তার স্ত্রী সিএমএইচে ভর্তি হন। ২২ জুন মন্ত্রী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও লায়লা আরজুমানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তিনি সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৯ জুন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর স্ত্রী লায়লা আরজুমান মারা যান।
জুলাই
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম: ২০২০ সালের ১ জুলাই কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পরে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকার পরে ১৬ দিনের চিকিৎসা গ্রহণ করার পরে ফলোআপ পরীক্ষা করানো হয় সংক্রমণ মুক্ত হয়েছেন কিনা তা জানার জন্য। দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষায় প্রতিমন্ত্রীর করোনা সংক্রমণ নেই বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
আগস্ট
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন: ১১ আগস্ট উপসর্গ থাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নমুনা পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়। ১২ আগস্ট তার মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ দিন তাকে চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। করোনামুক্ত হয়ে সিএমএইচ থেকে ২০ আগস্ট সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেন তিনি।
সেপ্টেম্বর
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। চিকিৎসকের পরামর্শে সরকারি বাসভবনে হোম আইসোলেশনে থাকার পরে ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি সংক্রমণমুক্ত হন।
অক্টোবর
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান: কয়েকদিন জ্বরে ভোগার কারণে ১১ অক্টোবর কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তকরণের জন্য নমুনা দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ১৩ অক্টোবর পরিকল্পনামন্ত্রীর কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। প্রায় ২০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে ২ নভেম্বর পরিকল্পনামন্ত্রী হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে যান।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ: ১৬ অক্টোবর উপসর্গ দেখা দেওয়ায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) নমুনা পরীক্ষা করান। একই দিন তিনি চিকিৎসকদের পরামর্শে ভর্তি হন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এখানেই তিনি জানতে পারেন কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের বিষয়ে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নেন।
২৪ অক্টোবর দ্বিতীয় দফা কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তকরণের নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল আসে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন: ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের। পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে হোম আইসোলেশন পর্ব পার করে ৩০ অক্টোবর নমুনা পরীক্ষা করতে দেন। এদিন তার মাঝে আর কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।
নভেম্বর
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ: সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের সহধর্মিণী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরিন আহমেদের কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৩১ অক্টোবর। তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে থাকেন। ৪ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর নমুনা পরীক্ষা করালে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। প্রায় একই সময় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব আহমদ কবিরও।
প্রায় এক মাস পরে করোনামুক্ত হন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন: ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৪৭তম সম্মেলনে যোগদানের জন্য নাইজার সফর উপলক্ষে নিয়মিত পরীক্ষার অংশ হিসেবে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ২৫ নভেম্বর তার কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বাসায় আইসোলেশনে থেকে তিনি করোনামুক্ত হন। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের করোনা পরীক্ষা করা হলে তারও সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তারা বাসায় আইসোলেশনে থাকেন। পরবর্তীতে তারা সুস্থও হয়ে ওঠেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম: দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকেই মানুষকে বিভিন্নভাবে সচেতন করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ১২ নভেম্বর তার মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত নিশ্চিত হওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাসায় হোম আইসোলেশনে থেকে ধীরে ধীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেন।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল: যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের নমুনা পরীক্ষার জন্য ফলাফল জমা দেওয়া হয় ১৫ নভেম্বর। এ দিন তার মাঝে সংক্রমণ শনাক্তও করা যায়। পরবর্তী তিনি হোম কোয়ারেনটাইনে থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মুক্ত হয়ে উঠেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার: ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয় বেগম হাবিবুন নাহারের। এরপর করোনার পজিটিভ আসে।
ডিসেম্বর
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি: ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনির মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সংক্রমণ শনাক্ত পরবর্তী সময়ে তিনি সরকারি বাসভবনে আইসোলেশনে থাকেন। ২১ ডিসেম্বর তিনি সংক্রমণ মুক্ত হন।
সারাবাংলা/এসবি/এসএসএ