‘জিনের বাদশা’র ফাঁদে প্রকৌশলীর দেড় কোটি টাকা, গ্রেফতার ৪
১০ মার্চ ২০২১ ১৫:৫৪
ঢাকা: অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করা, সাদা কাগজ দিয়ে কার্টুন ভর্তি কোটি কোটি টাকা তৈরি করাসহ নানান কাজে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়ে নিজেদেরকে জিনের বাদশা দাবি করতো একটি চক্র। তাদের কৌশলে সহজেই মুগ্ধ হতো সাধারণ মানুষ। এই সুযোগে একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে দেড় কোটি টাকারও বেশি অর্থ।
জানা গেছে, এক ভুক্তভোগী আব্দুল খালেক খান নামে এক প্রকৌশলীর অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রের সদস্যদের ধরতে ফাঁদ পাতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে অভিযান চালিয়ে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জিনের বাদশা পরিচয় দেওয়া মো. তারিকুল ইসলাম (৪০) ও তার সহযোগী আব্দুল্লাহ বিশ্বাস (৩৩), আল মাসুম (২৮) ও সাইদুল ইসলাম রাজু (৩০)।
অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, ভুক্তভোগী মো. আব্দুল খালেক খানের স্ত্রী ও সন্তান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসায় খুব একটা লাভ হচ্ছিল না। একদিন খালেকের সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান তাকে জানান, তরিকুল ইসলাম নামে একজন জিনের বাদশা আছেন- যিনি এসব বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা করান। এমন খবর পেয়ে আব্দুল খালেক সেই ‘জিনের বাদশা’ তারিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ‘জিনের বাদশা’ খালেককে আশ্বস্ত করেন তিনি চিকিৎসা করতে পারবেন। সে মোতাবেক ‘জিনের বাদশা’ কিছু ওষুধও দেয়। ওষুধে খালেকের স্ত্রী-সন্তান কিছুটা সুস্থ হয়। সুস্থ হওয়ার পরে জিনের বাদশার প্রতি খালেকের বিশ্বাস জন্মায়।
এরপর প্রতারক ‘জিনের বাদশা’ খালেককে বলেন, যত টাকা দরকার তত টাকা জিনের বাদশা তৈরি করে দিতে পারবেন। প্রমাণ হিসেবে জিনের বাদশা খালেকের সামনেই একটি লাল বালতির মধ্যে রাখা সাদা কাগজে এক হাজার টাকার একটি চকচকে নোট তৈরি করে দেয়। আরও বেশি বিশ্বাসের জন্য খালেক জিনের বাদশাকে বলেন, এটা তো নতুন নোট আপনি কিছু পুরাতন টাকা তৈরি করে দেখান। এরপর সে ওই বালতির মধ্যে কিছু পুরাতন টাকাও তৈরি করে দেখায়। ম্যাজিকের মতো এমন ঘটনা দেখে খালেকের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, টাকা বানিয়ে দেখানোর পর খালেকের বিশ্বাস দৃঢ় হলে তরিকুল খালেককে প্রস্তাব দেয় সে তার চাহিদা অনুযায়ী টাকা বানিয়ে দিতে পারবে। এ কথা শুনে খালেক ৬ কোটি টাকা বানিয়ে দিতে বলে। তার চাহিদা অনুযায়ী ৬ কোটি টাকা জিনের বাদশা তৈরি করে দিতে রাজি হয়। তবে একটি শর্ত জুড়ে দেয় জিনের বাদশা। শর্ত হল- পৃথিবীতে যত মসজিদ আছে সব মসজিদে একটি করে কোরআন শরীফ কিনে দিতে হবে। এটি করলে ৬ কোটি টাকা পাবে। আর এজন্য খরচ করতে হবে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এ টাকা দিলে ৬ কোটি টাকা একটি কার্টুনে সাদা কাগজ দিয়ে তৈরি করে দেবে জিনের বাদশা।
তার কথায় বিশ্বাস করে বাজার থেকে ৬ কার্টুন এ ফোর সাইজের সাদা কাগজ কিনে আনেন খালেক। কাগজ কিনে আনার পর জিনের বাদশা বলেন, আপনারা যতদিন কোরআর শরীফ কেনার জন্য এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা দিতে পারবেন না ততদিন কার্টুনটি খোলা যাবে না। এ কথায় বিশ্বাস করে আব্দুল খালেক কার্টুনটি নিয়ে ঘরের এক কোনায় রেখে দেয়।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জিনের বাদশার এমন প্রলোভনে আব্দুল খালেক দফায় দফায় এক কোটি ১৩ লাখ টাকা জিনের বাদশাকে দেয়। সেইসঙ্গে খালেকের সহকারী আরও ৫৩ লাখ টাকা দেন। এতে দুজনের মিলে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা হয়। আরও দুই লাখ টাকা বাকি থাকে। বাকি দুই লাখ টাকা দেওয়ার জন্য জিনের বাদশা চাপ দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে খালেকের সন্দেহ হতে থাকে। আসলেও এই কার্টুনে এত টাকা আছে কি না! এমন সন্দেহে খালেক কার্টুনটি খুলে দেখে টাকা হওয়া তো দূরের কথা তার কেনা সাদা কাগজ ছাড়া আর কিছুই নেই। এ সময় প্রতারক চক্রটি ঢাকা থেকে যশোরে গিয়ে বাকি দুই লাখ টাকা এসএ পরিবহনের মাধ্যমে পাঠাতে বলে। প্রতারক চক্রের বিষয়ে ভুক্তভোগী সিআইডিতে অভিযোগ দিলে সিআইডির ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম এর একটি টিম বাকি ২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য ফাঁদ পেতে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, নগদ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, দুইটি ভেকু, টাকা তৈরির সাদা কাগজসহ বাক্স, মাজারের মাটি, লাল কালিতে আরবি লেখা কাগজ জব্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক।
সারাবাংলা/এসএইচ/এএম