‘ফুসফুসের বাইরের যক্ষ্মা নির্ণয় ঠিকমতো হয় না’
৯ মার্চ ২০২১ ২০:০৩
ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেছেন, ফুসফুসের মধ্যেই এখন আর যক্ষ্মা সীমাবদ্ধ নেই। অন্যান্য অঙ্গে যে টিবি হচ্ছে সেটির নির্ণয় ঠিকমতো হয় না। আমরা দেশ থেকে টিবি নির্মূল করতে চাই। কিন্তু দিনে দিনে এর জটিলতা বাড়ছে।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত বছরব্যাপী যক্ষ্মা সচেতনতা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, প্রচলিত যক্ষ্মার বাইরে আর যেসব যক্ষা আসবে সেগুলো নিয়েও আমাদের কাজ করা দরকার আছে। শিশুদের টিউবারক্লোসিস নিয়েও আমাদের কাজ করা দরকার। আমি সার্জন হিসেবে যে জায়গায় বিব্রত সেটা হলো, পোর্ট সাইড টিউবারক্লোসিস, যেটা ল্যাপরোস্কোপি করার সময় যেখানে ছিদ্র করা হয় সেই জায়গায় টিবি, অপারেশনের পরে স্কারের যে টিবি হচ্ছে, এই টিবিগুলো নির্ণয় হচ্ছে না ঠিকমতো। শুধু আন্দাজের ওপর ওষুধ দিয়ে দেখা যাচ্ছে, মাসের পর মাস ওষুধ খাচ্ছে, কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না। এগুলোকে আপনারা তুলে ধরেন। সচেতনতা অবশ্যই বাড়াতে হবে, না হলে মানুষ জানবে কীভাবে।
তিনি বলেন, আমি অনেক নারী রোগী পেয়েছি যাদের টিবি হয়ে পেলভিস ফ্রোজেন হয়ে গেছে। যার কারণে বাচ্চা হচ্ছে না, প্রাথমিক বন্ধ্যাত্ব হচ্ছে। সেটি নিয়ে সংসারে অশান্তি, বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটছে। এখনকার যে টিবি সেটি ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ না। শরীরের যেকোনও জায়গায় টিবি হতে পারে। এতে রোগীরা শেষমেশ ভালো হয়তো হয়, কিন্তু জীবনের মান কমে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেশ থেকে টিবি নির্মূল করতে চাই। কিন্তু দিনে দিনে এর জটিলতা বাড়ছে। বিশেষ করে হাড়, অন্ত্র, জরায়ু এবং অস্ত্রপচারস্থলে যক্ষ্মার সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে, যা নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত যক্ষ্মা নির্ণয় ও প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে।
যক্ষ্মা শুধু নির্দিষ্ট কোনো একটি অঙ্গের রোগ নয়। যক্ষ্মা হয় না, শরীরে এমন অঙ্গ খুব কমই আছে। শতকরা ৮৫ ভাগ যক্ষ্মা ফুসফুসেই হয়ে থাকে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, একজন যক্ষ্মা রোগী থেকে কমপক্ষে ছয় জনে রোগটি ছড়াতে পারে। তাই কোথাও একজন যক্ষ্মা রোগী পাওয়া গেলে তার সম্পৃক্ত কমপক্ষে ছয়জনকেই পরীক্ষা করাতে হবে। করোনার কারণে যক্ষ্মা নির্মূল কর্মসূচিতে কিছুটা শৈথিল্য দেখা দিয়েছে। তবে দ্রুতই সেটি পুষিয়ে নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশ যক্ষ্মা নির্মূলে যথেষ্ট সফল।
তিনি বলেন, যক্ষ্মা শনাক্তকরণই আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। যক্ষ্মায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৯৬ শতাংশ সাফল্য এসেছে। জটিল যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একশ উপজেলায় ডিজিটাল এক্সরে স্থাপন করা হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম। এতে উপস্থিত ছিলেন- ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) কাজী জেবুন্নেসা, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, সংসদ সদস্য এরোমা দত্তসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এসবি