ঢাকা: ১৯৯১ সালের পর থেকে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে সংবিধান সংশোধন করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। এই দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত থেকে মানুষকে বাঁচাতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন, দেশ ও দেশের মানুষকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে বাঁচাতে হবে। ১৯৯১ সালের পর থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এই একনায়কতন্ত্র থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে।
বুধবার (১০ মার্চ) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও পার্টির ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের আরও বলেন, যারা ক্ষমতায় যাচ্ছে তারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দলবাজি ও টেন্ডারবাজি করে আঙুল ফলে কলা গাছ হচ্ছে। দেশের হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা আইনের ঊর্ধ্বে থেকে দুর্নীতি করে। সরকার দলীয়দের বিরুদ্ধে কোনো আইন নেই, আইন শুধু বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের হাত থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা বিএনপির হাতে গেলে শুধু কালেক্টর পরিবর্তন হবে। টাকার অঙ্ক বাড়বে, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দেশের জনগণ জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়। তাই দলকে সুসংহত করতে হবে।
নোয়াখালীর বসুরহাটের কথা তুলে ধরে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গেল রাতেও একজন খুন হয়েছেন। প্রায় ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তাদের দল একটাই, নেতাও একজনই। শুধু ভাগাভাগীর কারণেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। দেশের মানুষ এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়। জাতীয় পার্টি দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে রাজনীতি করছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু বৈষম্য থেকে মুক্তি পাইনি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো জোটে নেই। নির্বাচনে কিছু আসনে ইলেকশন অ্যারেজমেন্ট হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ আসনেই আমাদের প্রার্থীরা লড়াই করেছে। নির্বাচনের পর থেকে আমরা বিরোধী দলের ভূমিকায় আছি। আমরা দেশ ও মানুষের কল্যাণে কথা বলবই। আমরা আমাদের রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাব।
মতবিনিময় সভায় জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কলুষিত করেছে বর্তমান সরকার। বিএনপি দুর্নীতি ও দুঃশাসনের যে অপরাজনীতি শুরু করেছিল, বর্তমানে আওয়ামী লীগ তা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। দেশে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। দেশের মানুষ কথা বলতে পারছে না। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের সংশোধন চাই।
সভায় বক্তব্য রাখেন— জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা, জাপা চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, মো. জহিরুল আলম রুবেল, মাহজাবিন মোর্শেদ, ডা. কে আর ইসলাম, পনির উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ উল্লাহ, প্রফেসর সবিতা বেগম, নাজনিন সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম মধু, সালমা হোসেন, অ্যাডভোকেট মো. তোফাজ্জল হোসেন, মৌলভী মো. ইলিয়াস, এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, মো. আবু সালেক, মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শরিফুল ইসলাম চৌধরী, ইয়াহ ইয়া চৌধুরীসহ অন্যরা।