নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ কৃতদাসের চেয়েও খারাপ: মির্জা ফখরুল
১০ মার্চ ২০২১ ২২:৪৫
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ ক্রীতদাসের চেয়েও খারাপ। সরকারকে কিছু বলতে হয় না, তার আগেই তারা ( নির্বাচন কমিশন) বলে দেয়-খুব ভালো নির্বাচন হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব জয়লাভ করেছে।
সিটি করপোরেশনসমূহের নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বুধবার (১০ মার্চ) বিকেলে ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির উদ্যোগে খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের সামনের সড়কে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ সব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। অবিলম্বে এই নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন নতুন করে যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা কি ভোট দিতে গেলে ভোট দিতে পারি? এই যে আমাদের ৬ জন মেয়র প্রার্থী এখানে বসে আছেন তারা কেউ ভোট করতে পারেননি। তাদের ভোটের দিন সবাইকে বের করে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে এবং সন্ধ্যা বেলা তাদের পছন্দমতো ফলাফল ঘোষণা করেছে। শুধু সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নয়, ২০১৪ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচনেও ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নেইনি। আবার ২০১৮ সালে কৌশল পরিবর্তন করে আগের রাত্রে ভোট ডাকাতি করে নিয়েছে।’
‘চিফ ইলেকশন কমিশনার যখন বলেন যে, ভোট সুন্দর হযেছে, সুষ্ঠু হয়েছে। অথচ তারই একজন কমিশনার মাহবুব তালুকদার খুব পরিষ্কার করে বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণ করবার, ভোট পরিচালনা করবার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার যোগ্য নয়’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সরকার খুব দুর্বল সরকার। এত দুর্বল যে, নিজেদেরকে রক্ষা করবার জন্য নতুন নতুন আইন তৈরি করতে হয়। এই যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। মোবাইল, ফেইসবুকে কে কোথায় কি বলে না বলে ওইগুলো দেখে। তারা যন্ত্র নিয়ে এসেছে ইসরাইল থেকে। যে দেশের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। আল-জাজিরা টেলিভিশন আবার সেটা প্রচার করে দিয়েছে। কী ভয়াবহ প্রচার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমেরিকার ১০ জন সিনেটর চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই, বাংলাদেশে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড হয়, বাংলাদেশে বিনা বিচারে মানুষকে আটক রাখা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয় চরমভাবে তখন ইমেজ নষ্ট হয় না। যখন সাত সাতটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বিবৃতি দেয়-বাংলাদেশে মানুষের মানবাধিকার নেই, এখানে হয়রানি-নিপীড়ন করা হচ্ছে তখন ইমেজ নষ্ট হয় না?’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ঢাকা সফরকালে সীমান্ত হত্যা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা নিয়ে এই সরকারের এত দুর্বলতা কেনো? কেনো সে নিজের নাগরিকের কথা বলতে ভয় পায়। কেনো কানেকটিভি ওরা চায়? আমরা চাই যে, কানেকটিভি হোক। বাণিজ্য বাড়ুক, প্রসার ঘটুক। কিন্তু আমি কিছুই পাব না। আমি পোর্ট দিয়ে দেব, আমার এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে দেব, আমার রাস্তা ব্যবহার করতে দেব, কিন্ত বিনিময়ে আমি ফেনী নদীর পানিরও হিস্যা পাব না, তিস্তা নদীর পানিরও হিস্যা পাব না। এটা হতে পারে না। সেখানে আমরা স্বাধীন কোথায়?’
ঢাকা উত্তর বিএনপি আয়োজিত এই সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল মোহাম্মদপুরের শহীদ পার্কে। রাতে পুলিশ সেখানে আপত্তি জানালে সমাবেশের স্থল পরিবর্তন করে খিলগাঁওয়ে আনা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই সরকারের দুরভিসন্ধির কোনো সীমা নাই। তারা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু বোঝে না। একমাত্র চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করেই তারা ক্ষমতায় টিকে আছে, টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এই অবৈধ নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নৈশভোটের নির্বাচনের যে বৈধ্যতা দিয়েছে, সেই বৈধ্যতা দেওয়ার ফলে আজকে আওয়ামী ভুত আমাদের ওপর চেপে বসেছে। তাদের অত্যাচার, তাদের নিপীড়ন, তাদের লুট, তাদের খুনের কোনো শেষ নাই। আমি এই অথর্ব নির্বাচন কমিশনারকে বলতে চাই, এই সমস্ত খুন, লুট, খুনি-ডাকাতি কোনো কিছু থেকে আপনি মাফ পাবেন না। আওয়ামী লীগের বিচার হওয়ার আগে এই নির্বাচন কমিশনারের বিচার হবে, তাদের শাস্তি হতে হবে।’
ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যেভাবে ধারণ করেছে সেটি আমাদেরকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও রক্ষী বাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের এই গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে আজ পর্যন্ত এক হাজারের উপরে নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছে।’
সভাপতির বক্তব্যে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিখ আউয়াল বলেন, ‘আজকে তালতলার মার্কেটের সামনে যে জনতার ঢল নেমেছে সেখানে বিএনপি কর্মীরা শুধু নয়, সাধারণ মানুষেরাও যোগ দিয়েছে। আমরা জানি, ঢাকাসহ বাংলাদেশে নিয়মিত একটা ভোট কর্মসূচি নামে একটা তামাশা দেখছি। নিয়মিত আমাদের ভোটকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, আগের রাতে ভোটের বাক্স ভরিয়ে রাখে তারপরে ইভিএমের মাধ্যমে আমাদের ভোট ছিনিয়ে নেয়। এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হলে আর ‘নিশ্চুপ’ না থেকে সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মজিবুর রহমান সারোয়ার, খুলনার নুজরুল ইসলাম মনজু, চট্টগ্রামের ডা. সাহাদাত হোসেন ও রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শ্যামা ওবায়েদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, আবদুস সালাম আজাদ, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মহানগর দক্ষিনের কাজী আবুল বাশার, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, এসএম জাহাঙ্গীর, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, শ্যামা ওবায়েদ, আজিজুল বারী হেলাল, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মীর সরফত আলী সপু, আমিনুল হক, শামিীমুর রহমান শামীম, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান শিমুল, মামুন হাসান, রাজিব আহসান, খন্দকার আবু আশফাক, শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/একে