Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দক্ষিণ আফ্রিকার করোনা ভ্যারিয়েন্টও পাওয়া গেছে বাংলাদেশে

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১১ মার্চ ২০২১ ০৯:১৬

ঢাকা: দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নতুন স্ট্রেইন ‘বি১.৩৫১’ বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। বুধবার (১০ মার্চ) সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।

জার্মান সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটার (জিআইএসএইড) তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, বাংলাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে ২৪ জানুয়ারির নমুনা পরীক্ষায়। যার তথ্য জিআইএসএইডে আপলোড করা হয় চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি। জিআইএসএইড নামের এই সংস্থাটিতে করোনাভাইরাসের সব ধরনের জিনোম সিকুয়েন্সের তথ্য জমা রাখা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই সাইটে সিকোয়েন্সিং জমা দেওয়া হয়।

জিআইএসএইডে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি ৫৮ বছর বয়সী এক নারীর নমুনা পরীক্ষা করে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট GH/501Y.v2 (B.1.351) পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ল্যাব থেকে এই নমুনা পাঠানো হয় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর)। সেখানে সিকোয়েন্সিং করে দেশে এই নতুন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট পাওয়ার তথ্য জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। তবে আমাদের এখানে সেটি কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই ভ্যারিয়েন্ট অন্য কারও মাঝে ছড়ানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যার মাঝে এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে তিনি বর্তমানে সংক্রমণমুক্ত অবস্থায় আছেন।’

নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট ভ্যাকসিনের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও জানান ডা. আলমগীর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশে করোনাভাইরাসের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করা গবেষক সৈয়দ মুক্তাদির আল সিয়াম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভাইরাস আক্রান্ত হলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম ভাইরাসের কিছু অংশ চিনে রাখে এবং ওই অংশটুকুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। ভ্যাকসিনগুলোও ভাইরাসেরই অংশবিশেষ, কিন্তু রোগাক্রান্ত করার ক্ষমতা থাকে না। এই চেনানোর মাধ্যমেই শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরির কাজটা করে থাকে। ভাইরাসটি যদি সেই অংশটুকুতেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলে তাহলে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসটিকে ঠিকমত চিনতে পারবে না। ফলে ভাইরাসটি দ্বিতীয়বার সংক্রমণ ঘটাতে এবং ভ্যাকসিনকে ফাঁকি দিতে পারবে কিংবা ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিউটেশন কিন্তু হরহামেশা ঘটছে। নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসছে। আমাদের দেশে যেহেতু ইতোমধ্যে এরকম মিউটেশনযুক্ত অতি সংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্ট (দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট) পাওয়া গেছে তাই আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় কিন্তু কম কার্যকর হওয়ায় ভ্যাকসিন ফেরত দেওয়ার কথা শোনা গিয়েছে। এক্ষেত্রে অক্সফোর্ডও নতুন করে ভ্যাকসিন ডিজাইন করছে। তাই ভ্যাকসিন নির্বাচন বা কেনার ক্ষেত্রেও সরকারের সবদিক বিবেচনা করা উচিত। খেয়াল রাখা উচিত নতুন মিউটেশনগুলোর বিরুদ্ধে কোন ভ্যাকসিন কতটুকু কার্যকর।’

তবে ভ্যাকসিন নেওয়াটা জরুরি জানিয়ে এই গবেষক বলেন, ‘এটি কিছু ক্ষেত্রে কম কার্যকর হলেও বেশিরভাগ ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেই এটি কাজ করবে। আমাদের যা কিছু আছে সেটুকু নিয়েই এর বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হবে। এই ভাইরাসটি যত ছড়িয়ে পড়বে সেটি তত নিজের রূপ বদলের সুযোগ পাবে, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসবে। হয়ত সেজন্য বারবার ভ্যাকসিন নিতে হবে, একাধিকবার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটবে। নিকট ভবিষ্যতেই হয়ত এর বিরুদ্ধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা চলে আসবে। তার আগ পর্যন্ত লাগামহীনতা রুখতে সম্মিলিত সচেতনতা খুব বেশি জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনগুলোর প্রভাবের ওপর বিভিন্ন গবেষণা চলমান রয়েছে। বর্তমানে সেগুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরি। যেমন অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ ছয় সপ্তাহের চাইতে বেশি ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে ১২ সপ্তাহ পর প্রয়োগ করে।’

এর আগে বুধবার (১১ মার্চ) সকালে ডা. এ এস এম আলমগীর বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টও পাওয়া গেছে বলে জানান।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিষয়ে আমরা শুরু থেকেই সতর্ক ছিলাম। চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথমদিকে ছয় জনের করোনার নমুনায় যুক্তরাজ্যের নতুন ভ্যারিয়েন্ট খুঁজে পাই। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া যায়। মূলত ঢাকা ও সিলেটে এই ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দেশে যুক্তরাজ্য থেকে আসা সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার নিয়ম আছে তাই খুব একটা বেশি ছড়ায়নি এই ভ্যারিয়েন্ট। যাদের মাঝে সংক্রমণ পাওয়া গেছে তারা সবাই কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। আমরা তাদের আইসোলেশনে রেখে তত্ত্বাবধায়ন করেছি। একইসঙ্গে তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদেরকেও কন্টাক্ট ট্রেসিং করে বের করেছি। এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইন সেদেশে যেভাবে ছড়িয়েছে তেমন কোনো গতি বাংলাদেশে পাইনি।’

ডা. আলমগীর বলেন, ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা আমরা শুরু থেকে করছি। এক্ষেত্রে বলা যায়, বাংলাদেশে সেই ভ্যারিয়েন্টকে আমরা এখনো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। তারা বাংলাদেশে আসার পরে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। সেখানে হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাদের সংস্পর্শে এসেছে। তাদের নমুনা পরীক্ষা করে আমরা নতুন ভ্যারিয়েন্টের কোনো ট্রেস পাইনি। কিছু ক্ষেত্রে তাদের আত্মীস্বজনদেরও কন্টাক্ট ট্রেসিং করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে যাদের মাঝে নতুন স্ট্রেইন পাওয়া গেছে তাদের আইসোলেশনে রেখে নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে।’

ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা যে ভ্যাকসিন দিচ্ছি সেটি এই ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে কার্যকর। যুক্তরাজ্যেও এই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ভ্যাকসিন কাজ করছে না এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঢাকা শহরে আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, সিএইচআরএফসহ আরও অনেকে সিকোয়েন্সিং করছে। সুতরাং কোনো নতুন কিছু পেলে সেটি অবশ্যই আমাদের কাছে চলে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টের কোনো ভূমিকা নেই। মানুষের মধ্যে কিছুটা রিল্যাক্স মুড চলে আসায় সংক্রমণ বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও কিছুটা রিল্যাক্স ভাব দেখা যাচ্ছে। যার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘এই ভাইরাস দেশে কতটা ছড়িয়েছে তার বিস্তারিত জানতে কন্টাক্ট ট্রেসিং চলছে।’

সারাবাংলা/এসবি/এসএসএ

টপ নিউজ দক্ষিণ আফ্রিকার করোনা ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘তুফান’ আসছে হিন্দি ভাষায়
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯

সম্পর্কিত খবর