Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোথায় খালেদার সাজা স্থগিত করা হয়েছে— প্রশ্ন ফখরুলের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ মার্চ ২০২১ ১৫:৪২

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে দাবি করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন তুলেছেন, কোথায় সাজা স্থগিত করা হয়েছে?

শুক্রবার (১২ মার্চ) জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধনকালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও সাজা স্থগিতের বিষয়ে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা তাকে (খালেদা জিয়া) গৃহবন্দি করে রেখেছেন। চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চেয়েছেন, সেটাও আপনারা দেন নাই। আপনারা তাকে বাংলাদেশে রেখেই চিকিৎসা করতে বলছেন। যেখানে তার চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিনে দিনে।

তিনি বলেন, আমরা কঠিন সময় পার করছি। একটা সংকট মুহূর্ত পার করছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় মামলায় সাজা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আমরা এর নিচে কিছু চাই না। মুক্তি দিতে হবে, নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, যে সমস্ত নেতা-কর্মী বন্দি আছেন তাদের সকলে মুক্তি দিতে হবে। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ মামলা আছে সেই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। টানা ২২ বছর পর কৃষক দলের এই জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯৮ সালের ১৬ মে। সকাল ১০টায় মহানগর নাট্যমঞ্চের প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, রঙিন বেলুন ও সাদা কবুতর উন্মুক্ত করে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব ও আহবায়ক শামসুজ্জামান দুদু। এই সময়ে জাতীয় সঙ্গীত এবং পরে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

উদ্বোধনীর অনুষ্ঠানের বক্তব্যের সমাপ্তিতে সংগঠনের বিধান অনুযায়ী নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের পূর্বে কৃষক দলের ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। বিকালে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বিএনপি।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় বসে আছেন, দখল করে বসে আছেন। কি তফাত আপনাদের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আমাকে বুঝাবেন একটু? আমি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আপনাদের কোনো তফাত দেখি না। তারাও জোর করে বন্দুক দিয়ে মানুষকে মেরে ক্ষমতা দখল করে বসেছিল। আপনারা আজকে সেই একই কায়দায় মানুষকে হত্যা করে, নির্যাতন করে, জোর করে আপনারা ক্ষমতায় বসে আছেন।

তিনি বলেন, দয়া করে অতীতের কথা চিন্তা করুন। যখন আপনারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। সেই কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগকে যদি বাঁচাতে চান তাহলে অবিলম্বে যা আপনারা করেছেন তার জন্য মাফ চেয়ে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। পদত্যাগ করেন, নির্বাচন দিন। নতুন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচনে নতুন সরকার আসুক। নতুন পার্লামেন্ট আসুক।

কৃষকদের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, কৃষকদের সংগঠিত করতে হবে। তাদের অধিকার আদায় করতে কৃষক দলকে সক্রিয় হতে হবে। খালেদা জিয়া ৫ হাজার টাকার কৃষক ঋণ সুদসহ মওকুফ করে দিয়েছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দিয়েছিলেন। বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই কৃষকদের ঋণ সহজ করে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এই সরকার এখন পর্যন্ত কৃষকদের জন্য এমন কিছু করেনি যা দিয়ে তারা বলতে পারবে আমরা কৃষকদের জন্য এই এই কাজগুলো করেছি। কোভিড-১৯ এর প্রণোদনা দিয়েছে বিভিন্ন সেক্টরে, কৃষিক্ষেত্রেও দিয়েছে কিন্তু কৃষিক্ষেত্রের টাকাগুলো তাদের নেতারা (আওয়ামী লীগ) পকেটে ভরে নিয়েছে। আড়াই হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ছিল, সেটাও তারা পকেটে ভরে নিয়েছে। এই সরকার লুটেরা সরকারে পরিণত হয়েছে।

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এই দেশটাকে পৈত্রিক সম্পত্তি করে নিয়েছে। এই যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তিনি খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। চমৎকার চমৎকার আসনে বসে, ফিরোজা রঙের আসনে বসে তিনি প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকেন, প্রতিদিন তিনি বিএনপিকে ধমক দেন, শিক্ষা দেন। আরে আপনি আগে নিজের ঘরকে শিক্ষা দেন। আপনার ভাই কাদের মির্জা সাহেব যে সমস্ত কথা আপনার সম্পর্কে বলে, আপনাদের নেতাদের সম্পর্কে বলে; সেটার পরে তো আপনাদের থাকার কথা না। পদত্যাগ করা উচিত। আপনারা নিজের ঘরে নিজেরা মারামারি করে, দলাদলি করে ইতোমধ্যেই দুইজনকে হত্যা করেছেন- একজন সাংবাদিক, একজন রাজনৈতিক কর্মী। কোনো বিচার নাই। এটাই সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র। আমরা দেখেছি, কিভাবে আজকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, সমগ্র দেশটাকে তাদের দলীয় সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে এবং দেশটাকে তারা শোষণ করছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার করছে….। এই দেশটাকে তারা লুটেরা স্বর্গ রাজত্ব তৈরি করেছে।

উন্নয়নের নামে মেগা লুট চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আজকের পত্রিকায় দেখলাম ফাস্টেড ট্রেন, দ্রুতগামী ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার জন্য দুইটা চীনা কোম্পানি সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটে এটা করে দিতে চায়। পয়সা দেবে কে? পয়সা ওরা (চীন) এখন দেবে এবং সরকার আমাদের পকেট থেকে কেটে নেবে।

ফখরুল বলেন, আমাদের প্রশ্ন ওই জায়গায় আপনারা যে উন্নয়ন উন্নয়ন বলে চিৎকার করছেন, এই উন্নয়নে লাভবান হচ্ছে কে? লাভবান হচ্ছে আপনাদের কিছু মানুষ, যারা কমিশন এজেন্সি করে, যারা দালালি করে, বখরা করে শুধুমাত্র আপনাদের মানুষ উপকৃত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই উপকৃত হচ্ছে না।

কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে ও সদস্য এসকে সাদীর পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষক দলের সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, নাজিমউদ্দিন, আফতাব উদ্দিন আহমেদ মন্ডল, জামালউদ্দিন মিলন, এমএ হালিম, নাসির হায়দার, জিয়াউল হায়দার পলাশ, লুতফুর রহমান, মাহমুদুল হক সানু, শরীফুল ইসলাম মোল্লা, মহসিন আহমেদ তুষার, আনোয়ারুল হক, এনায়েতুল্লাহ খোকন, রবিউল হাসান পলাশ, সালাহউদ্দিন খান মিলকী, নাসিরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, রফিকুল আলম রফিক, মাহবুবুর রহমান আউয়াল, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা বক্তব্য রাখেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন তকদির হোসেন জসিম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্র্য ইসলাম অমিত, আবদুল খালেক, আমিরুজ্জামান শিমুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম ও ছাত্র দলের ইকবাল হোসেন শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এজেড/এএম

খালেদা জিয়া তারেক রহমান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর