জন্মশতবার্ষিকী: বিশ্বনেতাদের আগমনে থাকছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
১২ মার্চ ২০২১ ২২:৪৮
ঢাকা: বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ( মুজিববর্ষ) বাংলাদেশে বিশ্বনেতাদের আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরইমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আইন শৃঙ্খলাকারী বাহিনী হিসেবে পুলিশ-র্যাব কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে তার একটি রূপরেখাও প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশ্বনেতারা কোথায় থাকবেন, কোথায় ভ্রমণে যাবেন এবং কোথায় বৈঠকে অংশ নেবেন- এর সবকিছু ভালোভাবে সম্পন্ন করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির কয়েক দফা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চলতি মাসে ঢাকা সফরে আসবেন দক্ষিণ এশিয়ার চার শীর্ষ নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহামেদ সলিহ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
গত ১০ মার্চ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গঠিত নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে কমিটির আহ্বায়ক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আগামী ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। অনুষ্ঠানে দুটি দেশের প্রেসিডেন্ট ও দুটি দেশের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পাশে থাকা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘নেপাল ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট এবং ভারত ও শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত সফর নিশ্চিত করেছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘বিদেশি কুটনীতিকদের অনুষ্ঠানে আনা-নেওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদেশি অতিথিদের যাতায়াতে এবং যেসব হোটেলে তারা অবস্থান করবেন, সেগুলোর ভেতরে ও বাইরে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আসাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনুষ্ঠানে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সরকারের নেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করা হলো। সবাইকে অনুষ্ঠানস্থলে গেলে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস রাখা হবে। থাকবে জরুরি মেডিকেল সাপোর্টও। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমন্বয়ের জন্য একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে। অনুষ্ঠানস্থলে সব ধরনের ইউটিলিটি সেবা থাকবে। এ ছাড়া মশক নিধনের ব্যবস্থা করা হবে।’
যানজট এড়াতে এ সময় ছুটি দেওয়ার ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি নিয়ে আমাদের পুলিশ প্রধানসহ নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করবে। তারা অনুষ্ঠানের আগে সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দেবে, কীভাবে যান চলাচল করবে, কোন রাস্তা কতক্ষণের জন্য বন্ধ থাকবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো গোপন সংবাদ নেই। এই ধরনের পরিস্থিতি হবে কিনা আমরা ঠিক এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমরা মনে করি, সবাই বাংলাদেশকে ভালোবাসে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে। আমাদের জাতির পিতার উৎসব অনুষ্ঠানে কেউ ডিস্টার্ব করবে বলে আমরা মনে করছি না। তারপরও এটি গণতান্ত্রিক দেশ। সবার বাক-স্বাধীনতা রয়েছে। কে কী বললো, অনেক সময় অনেকে অনেক কিছুই বলে থাকেন। যার কোনো অর্থ হয় না। আমি মনে করি, এ ধরনের কোনও পরিস্থিতি হবে না। জাতির পিতার উৎসব অনুষ্ঠান করার জন্য আমরা সবার সহযোগিতা চাই। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।’
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে বিশ্বনেতাদের আগমন উপলক্ষে গত কিছুদিন ধরে সব জায়গায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রত্যেক এলাকাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে যেসব স্থানে বিশ্বনেতারা যাবেন সেখানেও বিশেষ ব্যবস্থায় নিরাপত্তার জন্য নজরদারির কাজ চলছে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষে জঙ্গিরা ছোট কিছু ঘটিয়ে বিশ্ব দরবারে বড় আকারে প্রকাশ করার একটা অপপ্রয়াস চালাতে পারে। যে প্রবণতা আগে থেকেই আছে। তবে সবকিছুতেই নিবিড় নজরদারি চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে ইন্টারনেট, অনলাইন ও অফলাইন সকল মাধ্যমে কাজ চলছে। যদিও বাংলাদেশে যেসব জঙ্গি সংগঠন আছে তাদের এই মুহূর্তে কোনো শক্তি নেই। সামর্থ্য নেই এই মুহূর্তে তারা কোনো কিছু করার। এরপরেও মনিটরিংয়ের যে কাজ তা গুরুত্ব সহকারে চলছে। মুজিববর্ষ ভালোভাবে পাড়ি দিতে মাঠে নেমেছে ডিএমপির সকল ইউনিট, সিআইডি, পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট ও র্যাবের সব ইউনিট।
র্যাব জানিয়েছে, ঢাকাসহ সারাদেশে মুজিববর্ষের সকল আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করবে। এরইমধ্যে তারা একটি রূপরেখা তৈরি করেছেন। সেই অনুযায়ী র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিট, ডগ স্কোয়াড, বোম ডিসপোজাল ইউনিটসহ সকলে প্রস্তুতি নিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের বেশ কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে জোরদার করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে থানার অন্তর্গত আবাসিক হোটেলগুলোতে বাড়তি নজরদারি নিতে বলা হয়েছে। টহল পার্টি বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। রাত্রিকালীন ডিউটিও বাড়াতে বলা হয়েছে। ফুটপাত পরিষ্কার রাখতে বলা হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাতেও সার্বক্ষণিক ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্বরত থাকতে বলা হয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে
গোয়েন্দা সংস্থা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মুজিববর্ষ শেখ মুজিবুর রহমান