Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পড়ার টেবিল, জামাকাপড় আগের মতোই আছে, নেই শুধু নীলা

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ মার্চ ২০২১ ১১:৪১

ঢাকা: গত সাত মাস আগে নীলা রায় চলে গেছে ওপারে। নীলার রেখে যাওয়া সবকিছু যতনে রেখেছেন মা মুক্তি রায়। পড়ার টেবিল, শোয়ার খাট, সাজিয়ে রাখা জামাকাপড় সবই আগের মতো। নেই শুধু নীলা! তবুও মা প্রতিদিন তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্রের যত্ন নেন।

দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে মুক্তির সংসার ছিল স্বর্গপুরীর ন্যায়। হঠাৎ এক ঝড় বাতাসে সব কিছু যেন এলোমেলো করে দিলো। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রিকশায় করে ভাই অলকের সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ার পথে নীলা রায়কে ছিনিয়ে নেন বখাটে মিজানুর রহমান মিজান। এরপর তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে বখাটে মিজান।

নীলা হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী অলক রায়। সেই ঘটনা মনে পড়ে এখনো ডুকরে ডুকরে কাঁদেন অলক। প্রিয় বোনকে হারিয়ে একাকী জীবন তার কাছে দুর্বিষহ মনে হয়।

নীলাকে হত্যার ঘটনায় মামলা চলছে আদালতে।

মামলা সম্পর্কে নিহত নীলার বাবা নারায়ণ রায় বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে নিয়ে বেশ ভালোই ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বখাটে মিজানুর আমার বুকের ধন মেয়েটাকে বুক থেকে কেড়ে নিল। মেয়েকে হারানোর প্রায় ৭ মাস হয়ে গেছে। যারা আমার মেয়েকে আমার কোল থেকে কেড়ে নিয়েছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। যেন আর কোনো মেয়েকে এভাবে অকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে না হয়।’

নীলার মা মুক্তি রায় বলেন, ‘কেন আমার মেয়েটাকে ওরা হত্যা করল? এটি আমি কোনোভাবেই মানতে পারছি না। সারাক্ষণ সে আমার পাশে পাশেই থাকতো। ওকে ছাড়া আমি চলতে পারছি না। মেয়ে নেই এটা ভেবেই আমার বুকটা টুকরো টুকরো হয়ে যায়। যারা আমার কলিজার টুকরা মেয়েকে হত্যা করেছে তাদের আমি ফাঁসি চাই।’

এ বিষয়ে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) নির্মল কুমার দাস জানান, মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে। তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। কিছু কার্যক্রম বাকি আছে। শেষ হলে মামলাটির চার্জশিট দাখিল করতে পারব।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রিকশায় করে ভাইয়ের সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ার পথে নীলা রায়কে ছিনিয়ে নেন মিজানুর রহমান মিজান। তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। নীলা মানিকগঞ্জ জেলার বালিরটেক এলাকার নারায়ণ রায়ের মেয়ে। পরিবারের সঙ্গে সাভার পৌর এলাকার কাজী মোকমাপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকত। স্থানীয় এ্যাসেড স্কুলে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে।

নীলার পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে নীলাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল একই এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিজান। আব্দুর রহমান-নাজমুন্নাহার দম্পতির সন্তান মিজান এইচএসসি পরীক্ষার্থী। নীলা তার প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণেই তিনি হত্যা করেছেন নীলাকে। এ ঘটনায় নীলার বাবা নারায়ণ রায় গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে মিজান, তার বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন্নাহার সিদ্দিকাসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে সাভার থানায়টি মামলা দায়ের করেন।

মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতর করেছে পুলিশ। মামলার আসামিরা হলেন, মিজানুর রহমান, তার বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন নাহার সিদ্দিকা, মিজানের সহযোগী সেলিম পহলান, সাকিব হোসেন। মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন নাহার।

মামলাটি তদন্ত করছে সাভার থানা পুলিশ। সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এ জন্য ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিকা খান আগামী ১২ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

সারাবাংলা/এআই/একে

টপ নিউজ নীলা রায় নীলা হত্যাকাণ্ড


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর