স্বামী গেল জেলে, ধানও গেল জলে

নড়াইল: একে তো স্বামীকে কারাগারে পাঠালো, এরপর ফসলি জমির ধান উপড়ে ফেলায় কান্না থামছেনা গীতা রানী বালার। এর প্রতিবাদে শনিবার (১৩ মার্চ) সকালে ধানক্ষেতেই মানববন্ধন করেন এলাকাবাসীরা। সদর উপজেলার আওড়িয়া ইউনিয়নের মুলদাইড় গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

মুলদাইড় গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম, সুরুচি রায়, বাসন্তী রানী, রেখা রানী বালা ও প্রত্যশী বালাসহ আরও অনেকেই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন।

এ সময় বক্তারা জানান, মুলদাইড় গ্রামের মৃত সুরেন বালার ছেলে সুনীল বালা একজন অসহায় বর্গাচাষী। পরের জমি চাষ করে সংসার চালান তিনি। দিন আনে দিন খায়। তিনি তালতলা গ্রামের জাহিদ মুন্সীর মুলদাইড় মাঠের ১৮ শতক জমিতে ইরি ধান আবাদ করেন এবং ফসলও ভালো হয়েছে। কিন্ত গতকাল (শুক্রবার) তালতলা গ্রামের মাওলানা গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে একদল লোক এসে সেই ধান ফসল উপড়ে ফেলেন।

তারা আরও বলেন, এই জমিতে বর্গাচাষ করার অপরাধে গত বুধবার রাত দেড়টার দিকে পুলিশ এসে থানায় কথা বলার কথা বলে নিয়ে গিয়ে সুনীল বালাকে আদালতে চালান করে। এমতাবস্থায় গীতা বালা সন্তান নিয়ে হতাশায় ও আতঙ্কে কান্নাকাটি করছে। তাই তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং অতি দ্রুত এর সুষ্ঠ সমাধান দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা গোলাম মোস্তফা বলেন, এটা আমার জমি। এ জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। সুনীল বালা ও ডাবলু এই জমিটি জবর দখল করে খাচ্ছিল। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। সেজন্য পুলিশ সুনীল বালাকে ধরে নিয়ে গেছে। আর পুলিশকে জানিয়েই আমি ওই জমি পরিষ্কার করেছি।

এ বিষয়ে জাহিদ মুন্সি বলেন, মাওলানা গোলাম মোস্তফা আমার সম্পর্কে চাচা হয়। প্রায় ৩৬ বছর পূর্বে আমার পিতার মৃত্যুর পর থেকে যোগসাজশ করে জোরপূর্বক আমার পিতার জায়গা জমি ভোগ দখল করে আসছিল। আমি ২০০১ সালে কর্মসংস্থানের উদ্দেশে বিদেশ (কুয়েত) চলে যাই। কুয়েতে থাকাকালীন সদর থানাধীন ১৩৭নং তালতলা মৌজার খতিয়ান নং- ৮৫ এর সাবেক দাগ নং- ৪৪ এর অধীনে ১৮ শতাংশ ধানি জমি জোরপূর্বক ভোগ দখল করতে থাকে।

তিনি আরও বলেন, আমি ২০১৫ সালে বাড়িতে আসার পর আমার জমি ভোগ দখল করতে থাকি। এরপর থেকে আমার চাচা ওই জমি জোরপূর্বক ভোগ দখল করার জন্য আমাকে খুন ও জখম করার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে। যার কারণে আমি জমিটি সুনীল বালাকে বর্গা দেই। সুনীল জমিতে প্রায় দুই মাস পূর্বে ইরি ধান বপন করে। এর মধ্যে শুক্রবার (১২ মার্চ) সকালে প্রায় ১০টায় বেআইনিভাবে লাঠিসোটাসহ আমার জমিতে প্রবেশ করে ধান উপড়ে ফেলে। এতে করে অনুমানিক ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছে এসআই শোভনকে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সুনীল বালার জামিনের জন্য সহযোগিতা করা হবে।

সারাবাংলা/এনএস

গীতা রানী বালা ধান উপড়ে ফেলা নড়াইল সুনীল বালা