লন্ডনে পুলিশি নির্যাতনের তীব্র সমালোচনা
১৪ মার্চ ২০২১ ১৩:৩৭
লন্ডনে সারাহ অ্যাভারার্ড হত্যার প্রতিবাদ এবং নারীর নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত করার দাবিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে পুলিশের ভূমিকা যুক্তরাজ্যে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। খবর বিবিসি।
পুলিশের এমন ভূমিকাকে অমর্য্যাদাকর হিসেবে বর্ণনা করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা স্যার অ্যাড ডেভি লন্ডনের পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে কৈফিয়ত তলব করেছেন। লেবার পার্টির প্রধান কিয়ের স্টারমার এই দৃশ্যপটকে মর্মান্তিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনে ৩ মার্চ সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন ৩৩ বছর বয়সী সারাহ অ্যাভারার্ড। এরপরই তার খোঁজে শহরের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার সাঁটানো হয়। বুধবার লন্ডনের ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে একটি জংলা জায়গা থেকে অ্যাভারার্ডের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরই হত্যার অভিযোগে ওয়েইন কোজেনস নামের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়।
অ্যাভারার্ডের স্মরণে এবং লন্ডন শহরে নারীর নিরাপদ চলাফেরা নিশ্চিত করার দাবিতে শনিবার (১৩ মার্চ) শহরের দক্ষিণে ক্ল্যাপহ্যাম কমনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেন নারীদের কয়েকয়টি সংগঠন।
কিন্তু ওই কর্মসূচিতে জনসমাগম করোনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এমন বিবেচনায় লন্ডন মেট্রো পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ সেখান থেকে অন্তত চার নারীকে গ্রেফতার করে।
ঘটনাস্থল থেকে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ কর্মকর্তারা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে জড়ো হওয়া নারীদের হাতকড়া পরিয়ে দিচ্ছেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে বয়াল হয়েছে, করোনা সংক্রমণ রোধে জারি করা বিধিনিষেধ ভেঙে নারী সংগঠনগুলো সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছিল। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে এমন কর্মসূচিতে লন্ডন পুলিশের এই বল প্রয়োগের ঘটনায় তীব্র সমালোনা ও নিন্দার ঝড় উঠেছে ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
রিক্লেইম দিজ স্ট্রিট নামের একটি গোষ্ঠীর কর্মীরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, পুলিশের এমন ভূমিকায় তারা খুবই মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ। তাদের অভিযোগ, নিরাপত্তার অজুহাতে পুলিশ কর্মকর্তারা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নারীদের গায়ে হাত তুলেছে, মারধর করেছে যা নারীর প্রতি সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ।
শৃঙ্খলা বজায় রাখা, জনস্বাস্থ্যের দেখভাল করার পাশাপাশি প্রতিবাদের অধিকার সুরক্ষার দায়িত্বও রাষ্ট্রের মাধ্যমে পুলিশের ওপরই ন্যস্ত, এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা ব্যর্থ হয়েছে।
তবে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটাই ছিল একমাত্র পথ।
এদিকে, নারী সমাবেশে পুলিশের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এক টুইটে বলেছেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া যৌক্তিক ছিল না। পুলিশ কমিশনারের কাছে ওই ঘটনার তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যাও চেয়েছেন বলে টুইটে জানিয়েছেন লেবার পার্টির নেতা সাদিক খান।
I will do everything I can to make sure the streets are safe and ensure women and girls do not face harassment or abuse.
— Boris Johnson (@BorisJohnson) March 13, 2021
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, নারীদর নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত করতে তার পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব, তিনি করবেন, নারীরা যেনো কোনো ধরনের হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার না হন তাও তিনি নিশ্চিত করবেন।
ওদিকে, সারাহ অ্যাভারার্ডকে হত্যার অভিযোগে ৪৮ বছর বয়সী পুলিশ কর্মকর্তা ওয়েইন কোজেনসকে শনিবার (১৩ মার্চ) লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) এ বিষয়ে আবারও শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
লন্ডনের নারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া
লন্ডনের রাস্তা থেকে অ্যাভারার্ডের নিখোঁজ হওয়া এবং তার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ব্রিটেনে নারীদের মধ্যে দারুণ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শহরের রাস্তায় রাতে একা বিচরণে নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারটি তুলে ধরে অনেক নারীকে হতাশা প্রকাশ করতে দেখেছে বিবিসি।
সারাহ অ্যাভারার্ডকে শেষবার যেখানে দেখা গিয়েছিল, দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের সেই ক্ল্যাপহ্যাম কমনের ব্যান্ডস্ট্যান্ডেই শনিবার (১৩ মার্চ) ফুল ও মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন হয়েছিল। সন্ধ্যা নাগাদ এক হাজার নারীর সমাবেশ হয় ঘটনাস্থলে। অ্যাভারার্ডকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতার জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান তারা।
এর আগে, সারাহ অ্যাভারার্ডের জন্য আনুষ্ঠানিক স্মরণসভা করতে চেয়েছিলেন প্রতিবাদকারীরা, কিন্তু মহামারিতে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞার কারণে লন্ডন পুলিশ তাদের অনুমতি দেয়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনসমাগম রোধ করা যায়নি।
সারাবাংলা/একেএম