৭ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৭০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ
১৫ মার্চ ২০২১ ০৯:৫৯
ঢাকা: চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়েছে ২৫ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। এটি পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৫ হাজার ৭০২ কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন দশমিক ৩৪ গুণ বেশি ঋণ নিয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৭ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকার। বিপরীতে চলতি অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে তিন দশমিক ৩৪ গুণ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়। কিন্তু জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সবশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুলাই থেকে জানুয়ারি এই সাত মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। এই সাত মাসে মোট বিক্রি হয়েছে ৬৫ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকার। আর মানুষ সঞ্চয়পত্র ভেঙেছে ৩৯ হাজার ৯১৮ কোটি টাকার। সুদ হিসেবে সরকার পরিশোধ করেছে ১৮ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমানে ব্যাংক আমানত সুদের হারসহ অন্য সবক্ষেত্রে সুদের হার কমে গেছে। জনগণনিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের দিকে বেশি ঝুঁকছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকে আমানত রাখলে আগে ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যেত। বর্তমানে তা কমে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। সঞ্চয়পত্রে এখনো ১০ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্র বিক্রির সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া না হলে প্রতি মাসে ২০ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি হতো।
কোন মাসে কোন সঞ্চয়পত্র বিক্রি: অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। এর পরিমাণ ১৩ হাজার ৬১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৭ কোটি ৮২ লাখ টাকার। এছাড়াও পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪৪১ কোটি ৮৬ লাখ টাকার। পেনশনার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২৭৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, আগস্টে ৩ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ২০৭ কোটি টাকা, অক্টোবরে ৪ হাজার ৩৪ কোটি টাকা, নভেম্বরে ৩ হাজার ৪০২ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে ১ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। সর্বশেষ জানুয়ারিতে বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমাতে সরকারের যত উদ্যোগ: সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে গত বছরের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার উপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একইসঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এসব কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কিছুটা কমতে শুরু করলেও বর্তমানে আবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।
সারাবাংলা/জিএস/এএম