ভ্যাকসিন পেয়ে সন্তুষ্ট শিক্ষকরা
১৫ মার্চ ২০২১ ১২:২৯
ঢাকা: সারাদেশেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা প্রতিরোধের ভ্যাকসিন পাচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যে দমবন্ধ পরিবেশ ও অজানা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল গেল একবছরে, ভ্যাকসিন পাওয়ায় সেটিও কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক। শুরুতে কিছুটা সংশয় থাকলেও এখন নিয়মিতই ভ্যাকসিন নিচ্ছেন শিক্ষকেরা।
পুরনো ঢাকার ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ কলেজের শিক্ষক বিপুল আহমেদ ভ্যাকসিন নিয়েছেন এই মাসেই। ভ্যাকসিন নিতে কোনো অসুবিধা হয়নি তার, বরং যে হাসপাতালে তিনি ভ্যাকসিন নিয়েছেন সেখানে ব্যবস্থাপনা ছিল চমৎকার।
সারাবাংলাকে এই শিক্ষক বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে প্রথমে গুজব ছড়িয়েছিল অনেক। কিন্তু সরকার যখন আমাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করলো তখন ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর শারীরিক জটিলতা টের পাইনি, দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্যও মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি।’
শিক্ষকদের আগে ভ্যাকসিন দেওয়ায় সরকারের প্রশংসাও করেছেন তিনি।
ঢাকা কলেজের শিক্ষক সিমিন বলেন, ‘বর্তমানে সরকার শিক্ষকদের অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। এ জন্য মহামারীর সময়ে সংশ্লিষ কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে যেভাবে খোঁজ খবর রেখেছে, ভ্যাকসিন দেওয়ার সময়ও সেভাবেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। এটা দেশের সব শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যই ভালো হয়েছে, কারণ শিক্ষকরা এতে খুশি হয়েছেন। যার পজিটিভ প্রভাব থাকবে শ্রেণি কার্যক্রমে।’ তিনি ভাকসিন কর্মসূচি শুরুর সপ্তাহেই ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
কেবল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন, মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের শিক্ষকরাও ভ্যাকসিন নিতে পারছেন সহজে। ভ্যাকসিন দেওয়ার বুথগুলোতে তাদের সঙ্গে করা হচ্ছে সহায়ক আচরণ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) বলছে, আগামী ২০ মার্চের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মচারী যেন করোনার ভ্যাকসিন নেয়। এই সময়ে দেশের সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্টকেও ভ্যাকসিন নিতে বলেছে তারা।
এ বিষয়ে ডিপিই মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক- কর্মচারীকে আগামী ২০ মার্চের মধ্যে কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকের জন্য উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না আমাদের কোনো শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাক। তাদের জন্য সরকার পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন ব্যবস্থা করেছে। এই সময়ে প্রতিদিন কতজন শিক্ষক-কর্মচারী ভ্যাকসিন নিচ্ছেন তার একটি হিসাবও আমরা রাখছি। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হলে আমরা গণমাধ্যমে তাদের সংখ্যা জানাব।’
এদিকে ১৫ মার্চ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২ লাখ ৮০ হাজারের মতো প্রাথমিক শিক্ষক-কর্মচারী করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে ডিপিই-এর আরেকটি সূত্র বলছে এই সংখ্যাটি ৩ লাখেরও বেশি।
এ ছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত ১ হাজার ৮৮৬ জনকে করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছে সরকার।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘৩০ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। এ কারণে ওই তারিখের আগেই ভ্যাকসিন গ্রহণের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি ২০ তারিখের আগেই সব শিক্ষককে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়েছেন এমন অনেক শিক্ষকের সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। তারা ভ্যাকসিন পেয়ে খুশি হয়েছেন। পুরো ব্যবস্থাপনার প্রশংসাও করেছেন। তারা এখন নিয়মিত ক্লাসে ফিরতে চাচ্ছেন।’
উল্লেখ্য, ৩০ মার্চ দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।
সারাবাংলা/টিএস/একে