ভালো শিক্ষক হলে ভালো পড়তে হবে: মুনতাসীর মামুন
১৫ মার্চ ২০২১ ১৯:৩৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বঙ্গবন্ধু চেয়ারে নবনিযুক্ত প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেছেন, ভালো শিক্ষক হলে ভালো পড়তে হবে। ভালো পড়তে হলে ভালো গবেষণা লাগবে।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে যোগদান সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আমরা শিক্ষকরা ক্রমান্বয়ে আমাদের স্বায়ত্তশাসনের বিধিমালা লঙ্ঘন করছি নানা কারণে। আমাদের এত হেয় করে ডাকা হয় কেন? আমরাই তো সুযোগ করে দিয়েছি। সরকার সমর্থক হলেও আমরা শিক্ষক। শিক্ষকদের দায়িত্ব সরকারকে সর্বাত্মক সমর্থন করা নয়। শিক্ষক শিক্ষক থাকবেন, তিনি কর্মচারী হবেন না। তিনি বেতন নেবেন। কিন্তু কাজ করবেন দেশ ও জাতির জন্য। মনে রাখতে হবে, আমি দল করব, রাজনীতি করব, আমার মতবাত থাকবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যলয়ের স্বার্থে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে থাকতে হবে। শিক্ষককে অবশ্যই ছাত্রদের জন্য কাজ করতে হবে, সরকারের জন্য নয়।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড.শিরীণ আখতার বলেন, ‘ড. মুনতাসীর মামুন আমাদের বাংলাদেশের সঙ্গে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে, মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা ও শিক্ষকতার সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত আছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর চেয়ারটিকে আরও উন্নতির দিকে নিয়ে যাবেন। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা চেতনা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ঢুকিয়ে দেবো। এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নতুন করে গবেষণা হবে। আমরা চাইব বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রচনা হোক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে, মানুষ হিসেবে, তদুপরি একজন বাঙালি হিসেবে। আমরা নতুনের আহ্বান শুনব এবং উত্তরোত্তর চেষ্টা করব বাংলাদেশের সেই মূল্যটাকে, মূল্যবোধটাকে বিজয়ের পথে সঞ্চারিত করতে এগিয়ে যাব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসানের সঞ্চালনায় ভিডিও কনফারেন্স জুম অ্যাপসের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান। এছাড়াও বক্তব্য দেন সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর মাইনুল হাসান চৌধুরী, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ড. মো. আবুল মনসুর, সাবেক প্রক্টর প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দীন, প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইয়া, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মহীবুল আজিজ, অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হামিদ হাসান নোমানী, কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন, হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদ।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বঙ্গবন্ধু চেয়ারে দায়িত্বে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ৫২৯ তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৌরবময় জীবন ও কীর্তি নিয়ে গবেষণা এবং তার স্মৃতি সংরক্ষণার্থে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেটের ৫১০তম সভায় ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ চালুর সিদ্ধান্ত হয়। তারপরে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ তৈরি করতে একটি কমিটি গঠন করে দেন। কমিটি প্রথমবারের মতো সৃষ্টি হওয়া ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর নাম সুপারিশ করে।
তবে একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও সিনেট সদস্যদের দাবি, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তৎকালীন উপাচার্য ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে আসীন হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু চেয়ারে যিনি বসবেন, তার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ২০ বছরের গবেষণাকাজ থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে অন্তত ১০টি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা–প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে হবে। সাবেক উপাচার্যের এ বিষয়ে কোনো গবেষণা প্রবন্ধ নেই বলে দাবি জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের।
পরে গত বছরের সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদবি ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সারাবাংলা/সিসি/পিটিএম