Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রিজার্ভ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে পায়রা বন্দর

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ মার্চ ২০২১ ২৩:০৬

ঢাকা: প্রথমবারের বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর জন্য ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ)’ শীর্ষক দুইশ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে প্রথম ঋণ পাচ্ছে পায়রা বন্দর। বন্দরের রামনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং শীর্ষক স্কিমে ঋণ দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এরই মধ্যে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সোনালী ব্যাংকের মধ্যে এ বিষয়ক চুক্তি সই হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রিজার্ভের অর্থ থেকে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল পরিচালনা করা হবে। আর এই তহবিল থেকেই সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ বছর মেয়াদে পায়রা বন্দরকে ঋণ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৫২৪ মিলিয়ন ইউরোর সমপরিমাণ অর্থ উঠিয়ে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের যাত্রা শুরু

তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ অর্থ থেকে পায়রা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে এই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। এই অর্থ সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হবে।’ কত শতাংশ সুদে এই অর্থ বিনিয়োগ করা হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়টি এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হচ্ছে। প্রথমবারের মতো এই তহবিল থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ১ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা দেবে সোনালী ব্যাংককে। আর সোনালী ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে এই অর্থ পায়রা বন্দরকে ঋণ দেবে। রিজার্ভের অর্থ থেকে নেওয়া প্রথম প্রকল্প হিসেবে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়ন পাচ্ছে পায়রা বন্দরের রামনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং প্রকল্প।

বিআইডিএফ তহবিলের উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এর আগে, সোমবার (১৫ মার্চ) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ)’ নামের এই তহবিলটি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেদের নিজের পায়ে চলতে হবে। এ জন্য অন্যের কাছে হাত না পেতে নিজেরা উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করব। দেশি-বিদেশি যারাই বিনিয়োগ করতে আসুক, আমরা নিজেরা অর্থায়ন করব। বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রাথমিক অর্থায়ন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ৪ জুন প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এরপর গত ৯ মাসে দেশের এই রিজার্ভে আরও ১০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ যোগ হয়েছে। এতে বর্তমানে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের কাছে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে কমপক্ষে ১১ মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগের পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন মত এসেছে। শেষ পর্যন্ত সরকার এই রিজার্ভের অর্থকে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ঋণ আকারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিআইডিএফ তহবিল থেকে ঋণ পেতে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি

রিজার্ভের অর্থের এই বিনিয়োগ কতটা কার্যকর হবে— এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে অর্থ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এই রিজার্ভটা আমরা অন্য জায়গায় রাখছি। বিশেষ করে আইএমএফ কিংবা বিদেশের ব্যাংকে এফডিআর হিসেবে রাখছি। অমাদের দেখতে হবে, রিজার্ভ জমা রেখে বিদেশি ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ সুদ পাচ্ছি। রিজার্ভের অর্থ এক শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়াটা অনেক কম হয়ে যাচ্ছে বলে আমার কাছে মনে হয়।

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে। এই অর্থ থেকে মোটামুটি ছয়-সাত মাসের আমদানি ব্যয়ের অর্থ সংরক্ষণ করে রেখে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া যেতে পারে। তবে পায়রা বন্দরকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে সভরিন (sovereign) গ্যারান্টি দেওয়া উচিত। কারণ এই বন্দর কবে লাভজনক অবস্থায় যাবে, আর রিজার্ভের অর্থের ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবে— এসব বিষয় নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এই ঋণ খেলাপি ঋণে পরিণত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনাও রয়েছে। সে কারণেই সরকারের উচিত সভরিন গ্যারান্টি দেওয়া।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

পায়রা বন্দর বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল বিআইডিএফ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রিজার্ভ থেকে ঋণ রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর