এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ মার্চেই
১৬ মার্চ ২০২১ ১৩:২২
ঢাকা: প্রথমবারের মতো তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করে দিতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য একটি ফর্মুলা চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। যা চলতি মার্চেই প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ উদ্যোগের ফলে এলপিজির দাম নিয়ে গ্রাহকরা যে বিড়ম্বনায় পড়তেন তা দূর হবে।
বিইআরসির তথ্য মতে, দেশে দিন দিন এলপি গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। ২০০৮ সালে দেশে গৃহস্থালি ও রান্নারর কাজে এলপি গ্যাসের ব্যবহার ছিল মাথাপিছু শূন্য দশমিক ৩ কেজি, কিন্তু ২০২০ সালে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৬৩ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১১ শতাংশ বা ৩৮ লাখ পরিবার এলপিজি ব্যবহার করেন। অন্যদিকে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৩ শতাংশ রান্নায় প্রাকৃতিক গ্যাস বা এনজি ব্যবহার করেন। বাকি প্রায় ৭৫ ভাগ জনগোষ্ঠী রান্নায় জ্বালানির জন্য বায়োমাসের ওপর নির্ভরশীল। দেশে রান্নার কাজের পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্য ও অটোমোবাইল খাতেও এলপি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে।
জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী দেশে বছরে ১৫ লাখ টনের বেশি এলপিজি দরকার। তবে বর্তমানে এলপিজি আমদানি ও বিক্রির পরিমাণ ১০ লাখ টন। এর মধ্যে ২০ হাজার টন এলপিজি সরকারিভাবে বিক্রি হয়। অর্থাৎ বিপিসি মোট চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ যোগান দেয়। বাকিটুকু বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী পাঁচ বছরে এর চাহিদা দ্বিগুণ হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলপিজিতে সরকারের অংশগ্রহণ সামান্য হওয়ার কারণে বাজারে দামের তারতম্য রয়েছে। সেজন্য গ্রাহকরা পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। সরকার এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দিলে গ্রাহকদের হয়রানি কমে আসবে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘প্রাকৃতিক গ্যাস যেহেতু কমে আসছে, সেহেতু আমদানির ওপরেই এখন নির্ভর করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে এলপিজির চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এলপিজি সহজলভ্য করতে হবে। ভবিষ্যতে এর চাহিদা আরও বাড়বে। তাই এটিকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’
সূত্র জানায়, দেশে এলপিজির দাম নির্ভর করে সৌদি আরামকো নামে পরিচিত সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানির নির্ধারিত দামের ওপর। এলপিজি তৈরির দুই উপাদান প্রোপেন এ বিউটেনের দাম প্রতি মাসে নির্ধারণ করে সৌদি আরামকো। বিইআরসির কারিগরি কমিটি বলছে, সৌদি সিপির ভিত্তিতে এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হবে। এর সঙ্গে এলসি মার্জিন, আমদানির জন্য জাহাজ ভাড়া, পরিবহন ব্যয়, ডিলার এবং আমদানিকারকদের লাভের অংশ ধরেই এই ফর্মুলা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এলপিজির দাম নির্ধারণ নিয়ে আদালতের নির্দেশসহ নানামমুখী চাপে রয়েছে বিইআরসি। এই চাপের মুখে গত ১৪ জানুয়ারি এলপিজির দাম নির্ধারণ করতে গণশুনানির আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। ওই শুনানিতে প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণের সুপারিশ করে এ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি। শুনানিতে সরকারি কোম্পানির প্রতি বোতল এলপি গ্যাস ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ করার প্রস্তাব আসে। আর বেসরকারি কোম্পানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান দাম থেকে কমিয়ে ১ হাজার ২৬৯ টাকা করার প্রস্তাব ওঠে।
সরকারি পর্যায়ে এলপিজির দাম বাড়িয়ে যে টাকা পাওয়া যাবে তা ভুর্তুকি তহবিলে জমা রাখার কথা বলেছিল বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি। এই অর্থ সরকার জ্বালানি খাতের অন্য ভুর্তুকি খাতে ব্যবহার করবে। যদিও গ্রাহকদের কাছ থেকে ভুর্তুকির টাকা আদায় করার এ প্রস্তাব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই দাম নির্ধারণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে একটা ফর্মুলায় এগোচ্ছে। যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম