আওয়ামী লীগ-বিএনপি কেউই জাপার বন্ধু নয়— জি এম কাদের
১৬ মার্চ ২০২১ ১৯:৩৫
ঢাকা: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই জাতীয় পার্টিকে ধংস করতে চেয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে জাপার ওপর হামলা-মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে। অফিস দখল করেছে, গুণ্ডা ও পুলিশ পাঠিয়ে সভা সমাবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। জাপার ওপর বিএনপি যে অত্যাচার করেছে, আল্লাহর বিচারে তারা এখন ১০ গুণ বেশি ফিরে পাচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে জাপার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে, ভাঙনের মুখে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই জাপার বন্ধু নয়।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে পার্টির নির্বাহী এবং কেন্দ্রীয় সদস্যদের সাংগঠনিক সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা মানায না। ১৯৯১ সালের পর তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কবর দিয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে তারা যেভাবে সংবিধান সংশোধন করেছে, তাতে দেশে গণতন্ত্র চর্চার পরিবেশ নেই। দেশে আইনের শাসন নেই, সুশাসন নেই।
জি এম কাদের বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মূল্যায়ন করলে প্রমান হবে, দেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল পাচ্ছেনা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দলীয়করন করেছে, যাকে স্বৈরতন্ত্র বলা যায়। দলীয়করনে দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি করলেই চাকরি ও ব্যবসায় সুযোগ আছে, সাধারণ মানুষের কোনো অধিকার নেই।
কাদের বলেন, হিসাব মতো দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। কিন্তু যারা সরকারি দল করে তাদের আয় বেড়েছে হাজার হাজার গুন। সাধারণ মানুষ মাথাপিছু আয়ের সুফল থেকে বঞ্চিত।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো। দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সৃষ্ট বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করে না। তারা রাজনীতি করে ক্ষমতা গিয়ে লুটপাট করার লক্ষ্য নিয়ে। লুটপাট করে তারা এতো টাকার মালিক হয়েছে যে, ছোট খাটো নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোটি কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নামে। যারা রিক্সা ভাড়া দিতে পারতো না, তারা এখন পাজেরো গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। যারা বাসা ভাড়া দিতে পারতো না, তারা অসংখ্য বাড়ির মালিক। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা কালো টাকার সঙ্গে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ কলুষিত করেছে।
এ সময় জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যারা সরকার গঠন করে সেই দলের কোনো এমপি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেনা ৭০ ধারার কারণে। এতে, প্রধানমন্ত্রী যা চান তাই পাস হয়। তার ইচ্ছার বাইরে কিছুই হয় না। দেশের নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে আইনসভা পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আর বিচার বিভাগের প্রায় ৯৯ ভাগই রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে। তাই সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দলীয়করণের কারণে একনায়কতন্ত্র এখন স্বৈরতন্ত্রের পর্যায়ে।
জি এম কাদের বলেন, হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ কখনোই জোর করে ক্ষমতা গ্রহণ করেননি। তখনকার রাষ্ট্রপতি দুনীর্তির কারণে রাষ্ট্র পরিচালনায় অপারগতা প্রকাশ করে রেডিও-টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্থান্তর করেছিলেন। তিন জোটের রুপরেখা অনুযায়ী ৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জন্য লেভেলপ্লেইং ফিল্ড ছিলো না। তখনকার তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এরশাদকে জেলে দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছে। তারপরও জাতীয় পার্টি ৩৫ আসনে জয়ী হয়েছে। ৯১ ও ৯৬ সালের নির্বাচনে জেলে থেকেও পাঁচ আসনে জয়ী হয়েছিলেন এরশাদ। দেশের মানুষ সব সময় পল্লীবন্ধু ও জাতীয় পার্টির সাথে ছিলো, এখনো আছে।
নেতা-কমীর্দের উদ্দেশে জি এম কাদের বলেন, দলকে আরো শক্তিশালী করুন, আগামী নির্বাচনে সব চেয়ে সম্ভাবনাময় পার্টি হচ্ছে জাতীয় পার্টি।
এ সময় জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, আওয়ামী লীগ লুটপাটের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও জাতির জনকে অসম্মান করেছে। কারণ, শুধু ভৌগলিক স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। দেশে এখন আর বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। লুটপাটের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাখো-কোটি টাকা পাচার করেছে। দেশে আইনের শাসন নেই, লেখক মুশতাক কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। নির্যাতনের শিকার কার্টুনিষ্ট কিশোর জেল থেকে মুক্তি পেলেও এখনো অসুস্থ্য। আওয়ামী লীগ ছাড়া সুবর্ণজয়ন্তী পালনে কোন দলের অধিকার নেই। রাজনীতি করার অধিকার যেনো শুধুই অওয়ামী লীগের।
তিনি বলেন, বিএনপি ২১ আগষ্টে গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। হাওয়া ভবন তৈরি করে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিলো।
ওই সভায় জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, জাপা কোনো জোটে নেই। আগামী নির্বাচনে এককভাবে লড়াই করবে জাপা। দেশের মানুষ এখনো জাপার ওপরে আস্থা রাখে। তাই দলকে শক্তিশালী করতে নেতা-কমীর্দের প্রতি আহবান জানান তিনি।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একেএম