ভাইকে মারতে দেখে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে সোহাগ’
১৭ মার্চ ২০২১ ২০:৪৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে সড়কে মোটর সাইকেলের মহড়া নিয়ে বিরোধের জেরে খুনের ঘটনায় ‘ছুরিকাঘাতকারী’ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিজের ভাইকে মারতে দেখে চা দোকান থেকে ছোরা নিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে ওই যুবক। সেই ছোরা একজনের বুকে লেগে বেশ খানিকটা অংশ ভেতরে ঢুকে যায়। আহত হয়ে পরে তিনি মারা যান।
বুধবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় নগরীর ডবলমুরিং থানার সিএন্ডবি কলোনি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া গেছে বলে জানান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-পশ্চিম) আব্দুল ওয়ারিশ খান।
গ্রেফতার মো. সোহাগ (২৮) নগরীর আগ্রাবাদ বেপারিপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তার বড় ভাই মো. মহসিনের সঙ্গে ঝগড়ার জেরেই বুধবার দুপুরে আগ্রাবাদে জাম্বুরি পার্কের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসের সামনে সংঘর্ষ হয়। এতে হাশেম খান (৩৫) নামে একজন নিহত হন। তিনি আগ্রাবাদের রঙ্গীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। পেশায় সাউন্ডবক্সের মেকানিক ছিলেন।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনের ভাষ্য অনুযায়ী, আগ্রাবাদের রঙ্গীপাড়া থেকে জাম্বুরি মাঠের দিকে পিকআপ ভ্যানে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে এবং মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের মহড়া দিয়ে একদল কিশোর-তরুণ-যুবক আসছিল। তাদের মহড়ার কারণে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় রিকশায় করে ওই এলাকা অতিক্রম করা স্থানীয় যুবক মহসিন পথে আটকে থাকেন। তিনি এর প্রতিবাদ করলে প্রথমে ঝগড়া ও পরে স্থানীয়দের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে একজন নিহত ও দু’জন আহত হন।
ডিসি (পশ্চিম) আব্দুল ওয়ারিশ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমে ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে ২৪ জনকে আটক করা হয়। ঘটনাস্থলে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না। তবে আমরা ঘটনাস্থলে সোহাগের বিষয়ে কিছু তথ্য পাই। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে আটক করি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) তাকে আদালতে হাজির করা হবে।’
গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্ণব বড়ুয়া সারাবাংলাকে জানান, গ্রেফতার সোহাগ পেশায় টাটা জুতা কোম্পানির গাড়িচালক। তার ভাই মহসিন চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা ট্রাকের চালক, মাঝে মাঝে বাসও চালান। তাদের দাদা-বাবা দু’জনই আগ্রাবাদে জাম্বুরি পার্কের পাশে সিএন্ডবি কলোনিতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মহসিন ও সোহাগের জন্মও সিএন্ডবি কলোনি এলাকায়। এখনও সেখানে তাদের দাদার বাসা আছে। তারা দুপুরে ওই বাসায় ভাত খান। বেড়ে ওঠা সেখানে বলে এলাকার সবাই তাদের চেনেন।
সোহাগের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসআই অর্ণব বলেন, ‘দুপুরে যখন ঘটনা শুরু হয়, রঙ্গীপাড়ার গ্রুপে প্রায় ১০০ জন ছিল। মহসিনকে মারতে দেখে স্থানীয় ১০-১৫ জন এগিয়ে যায়। তবে মহসিন এবং তার পক্ষের লোকজন রঙ্গীপাড়ার লোকজনের সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না। খবর পেয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে সোহাগ সেখানে যান এবং দেখেন, তার ভাইকে মহসিনকে মারধর করা হচ্ছে। এটা দেখে সে রেগে গিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসের সামনে ফুটপাতে একটি চা দোকান থেকে কনডেন্সড মিল্ক কাটার ছোরা নেন। সেই ছোরা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন।’
‘তিনজন ছুরিকাহত হন। একজনের পেটে, একজনের ঘাড়ে এবং আরেকজনের বুকে লাগে। বুকেরটা একেবারে গভীরে চলে যায়। সেজন্য তিনি মারা যান। এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত দেখে অনেকে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে সোহাগ সেখান থেকে সিএন্ডবি কলোনি এলাকায় চলে যায়। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করি।’ – বলেন এসআই অর্ণব বড়ুয়া
নগরীর আগ্রাবাদ মালিপাড়ায় নিহত হাশেমের টেলিভিশন মেরামতের একটি দোকান ছিল। হাশেম টেলিভিশন মেরামতের পাশাপাশি সাউন্ডবক্সের মেকানিক হিসেবে কাজ করত বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।
সারাবাংলা/আরডি/একে