Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রমজানের আগেই বাজার চড়া, দিশেহারা ক্রেতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৯ মার্চ ২০২১ ১৪:৩৩

ঢাকা: প্রতি বছর রমজান মাস এলেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ি বাড়িয়ে দেয় যাবতীয় নিত্যপণ্যের দাম। তবে এবছর আর রমজান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। তার আগেই আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে তেল আর চাল। দাম বাড়ছে প্রতিদিনই। যাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নিম্ন আর মধ্যবিত্ত ক্রেতারা।

রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজি বাদে সব পণ্যের দাম বাড়তি। তেল, ডাল, মাংসের দাম অনেকে বেড়েছে। চালের বাজার ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। পুরনো ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা কেজি, নাজির ৬৭ থেকে ৭১ টাকা, কাটারি নাজির, ৭১ থেকে ৭৩ টাকা, আটাশ ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা, স্বর্ণা চাল ৫০ টাকা, পোলাওয়ের চাল ৯০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কাপ্তানবাজার এলাকায় এক ক্রেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘দশ কেজি চাল কিনলে দুই দিনের আয় শেষ হয়ে যায়। বাজারে এলে দোকানিরা আমাদের নিয়ে মজা নেয়, দাম করেও কেনার সাধ্য হয় না। এমন ভাবে দাম বেড়েছে এখন দাম করারও সাহস হয় না। যে টাকা আয় করি তার তিন ভাগের দুই ভাগ চলে যায় বাড়ি ভাড়ায়, বাকি একভাগ দিয়ে একরকম চলি, এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে এখন আর সেটিও সম্ভব হচ্ছে না।’

এদিকে সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও বাজারে বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশে সয়াবিন তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১১৭ টাকা করা হয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই নির্ধারিত দামও মানছে না খুচরা দোকানিরা। তারা প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বাড়িয়ে ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা বিক্রি করছে। খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা কেজি।

টিসিবি বলছে, গত এক মাসে মাসে মিনিকেট ও নাজির বা সরু চালের দাম বেড়েছে ৪.১৭ শতাংশ। আর মাঝারি পায়জাম চালের দাম বেড়েছে ৩.৭৭ শতাংশ।

এদিকে চাল-তেলের মতো বেড়েছে মুরগিরও দাম। প্রতিকেজি বয়লার মুরগি আজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। বড় কক মুরগি ৩০০-৩৪০ টাকা কেজি, সোনালী মুরগির কেজি ৩৫০-৩৭০ টাকা। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, গরুর মাংস ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছের দামও। প্রতি কেজি বড় সাইজের রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, ছোট রুই ৩০০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে। তেলাপিয়ার ২৫০ টাকা কেজি, পাবদা ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দেশিয় পাঁচ মিশালি মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, চাষের পাঙ্গাস ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

সামুদ্রিক মাছের মধ্যে লাল ও কালো মাংশের টুনা মাছ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দেশি স্যামন বা তাইল্যা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। কোরাল বিক্রি হচ্ছে ৬০০ বা তারও কিছুটা কমে। ম্যাকারেল বা সুরমা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজির ওপরে। এছাড়াও মানের ইলিশের দাম হাজার ছাড়িয়েছে। বড় চিংড়ির দামও উঠেছে ৮০০ টাকার ঘরে। লবস্টার পাওয়া যাচ্ছে ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে।

সবজির মধ্যে কিছুটা বেড়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা। আলুর কেজি ২০ টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশি মসুর ডাল ৯০ টাকা আর দেশি মসুর ডাল ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বিদেশি রসুন ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা আবার দেশি নতুন রসুন মান ভেদে ৫০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।

এ মাসেই বাজারে নতুন এসেছে সজনে ডাঁটা। এখন প্রতি কেজিতে সজনে ডাঁটার দাম চাওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, বেগুনের কজি ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্য সবজির মধ্যে টমেটোর কেজি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ৪০ টাকা থেকে ৫০, গাজরের কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শিমের কেজি ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, পেঁপের কেজি ১৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা, প্রতিটি লাউ ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা, করোলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে সব ধরনের পণ্য পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় আসন্ন রমজানে বাজারে দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, ‘রমজান মাসের চাহিদা সামাল দিতে ব্যবসায়ী ও টিসিবির কাছে ভোজ্যতেল, চিনি, গুড়, খেজুর, পেঁয়াজসহ সব ধরনের পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দাম না বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি আছে। যেখানে ব্যবসায়ীরাও আছেন। এই কমিটি সব তথ্য নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করে দাম নির্ধারণ করে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/টিএস/এমও

টিসিবি দিশেহারা ক্রেতা বাজার চড়া


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর