Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুবর্ণজয়ন্তীর বইমেলায় থিম ব্যবস্থাপনায় কমতি, হারিয়েছে জৌলুসও!

প্রতীক মাহমুদ, জয়েন্ট নিউজ এডিটর
২০ মার্চ ২০২১ ২৩:০১

ঢাকা: শীত শীত আবহে কুয়াশার চাদরে ঢেকে প্রতিবছর বইমেলা শুরু হলেও এবারই ব্যতিক্রম। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে বইমেলার আয়োজন নিয়ে দ্বিধায় ছিল বাংলা একাডেমি। তবে শেষ মুহূর্তে করোনা আতঙ্কের মধ্যেই গতবারের চেয়ে দেড় মাস পিছিয়ে শুরু হয়েছে এবারের বইমেলা।

এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ হলেও বেশিরভাগ স্টলই সাদামাটাভাবে সাজানো হয়েছে। বেশিরভাগ স্টলে থিমের ব্যবহার নেই বললেই চলে। তবে যে কয়েকটি স্টল থিম নিয়ে কাজ করেছে, সেগুলোতে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতার জীবন ও কর্ম এবং স্বাধীনতার মর্মবাণী জাতীয় জীবনে যেন প্রতিফলিত হয় তার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হলেও মেলার সাজসজ্জায় মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে তেমন কিছু চোখে পড়েনি।

শনিবার (২০ মার্চ) মেলায় ঘুর দেখা গেছে, এবারের বইমেলার বিন্যাসেও মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। মেলার মূল অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে। তিনটি প্রবেশপথ বিবেচনায় রেখে স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোও বিন্যাস করা হয়েছে। আর এগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যেন কোনো এলাকা অবহেলিত বলে প্রতীয়মান না হয়। কিন্তু মেলার তৃতীয় দিনে এর কেন্দ্রেই মানুষের ভির লক্ষ্য করা গেল। বিশেষ করে স্বাধীনতা স্তম্ভের লেক ঘিরেই মানুষের আড্ডা দেখা গেছে।

এদিকে মেলায় ঢোকার সময় মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থবিধি মানায় বাধ্য বাধকতা থাকলেও সেখানে ঢোকার পর অনেককের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। এ নিয়ে কয়েকজনকে প্রশ্ন করা হলে তাদের কেউই কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। অনেককেই বলতে শোনা গেছে, স্বাস্থ্যবিধির বাধ্য বাধকতা কেবল মেলায় ঢোকার সময়। ঢোকার পর যাচ্ছেতাই অবস্থা।

বিজ্ঞাপন

বইমেলার তৃতীয় দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন গেট দিয়ে ঢোকার পর দেখা যায়, ওই প্রান্তটিতে শুধুমাত্র স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিরা বসে আছেন। সেখানকার প্রথম লাইনটিতে প্রায় ২০টির মতো স্টল থাকলেও কোনো ক্রেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপরের লাইনগুলোর অবস্থাও ধরতে গেলে একইরকম। একটু এগোতেই চোখে পড়ে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ। সেখানে কয়েকটি চেয়ারে গুটিকয়েক দর্শক নিয়ে চলছে লেখক-পাঠক আড্ডা।

‘লেখক বলছি’ মঞ্চের একেবারে পেছনেই ‘লিটল ম্যাগাজিন কর্নার’। বলতে গেলে এবারের বইমেলার সবচেয়ে অবহেলিত প্রান্ত বলে মনে হয়েছে এই জায়গাটি। সেখানে স্টল ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এমনকি বইমেলার অনেকটাই বাইরে মনে হয়েছে এই জায়গাটিকে। সেখানকার স্টলগুলোতে এখনো তেমন কেউ বই সাজিয়ে বসেননি। এমনকি সেখানে কোনো ক্রেতাও চোখে পড়েনি।

লিটল ম্যাগাজিন কর্নার নিয়ে কথা বলতে গেলে বাংলা একাডেমির উপপরিচালক (ফোকলোর বিভাগ) আমিনুর রহমান সুলতান সারাবাংলাকে বলেন, ‘লিটল ম্যাগাজিন কর্নার নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা চলছে।’ তবে কী ধরনের চিন্তা-ভাবনা চলছে বা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

মেলার মূল অংশে গিয়ে দেখা যায়, অন্যপ্রকাশের স্টলটিতে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পুরো থিম ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরো স্টলটিকে দেওয়া হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির আদল। সেই বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন শেখ মুজিব। এছাড়া পেছনে ও সাইডে যথাক্রমে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ও তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

কয়েকটি সারি অতিক্রম করলেই চোখে পড়ে ইউনিভার্সেল প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) স্টল। তাদের এবারের স্টলটি ছোট পরিসরের হলেও সেখানে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার থিম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর একটু এগিয়ে ডান দিকে গেলেই দেখা যায় আবিষ্কার প্রকাশনীর স্টলের সাজসজ্জা চলছে। তাদের স্টলটিকে বাংলাদেশের পতাকার রঙে রাঙানো হচ্ছে। তবে এবারের বইমেলায় নান্দনিক সৌন্দর্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কথাপ্রকাশের স্টলটি। কংক্রিটের স্থাপনায় বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে অন্যরকম আবহ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলা প্রকাশ ও পাঞ্জেরী প্রকাশনসহ হাতে গোনা কয়েকটি স্টলে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার থিম রাখার চেষ্টা করা হলেও মেলার বেশিরভাগ স্টলেই সেগুলো অনুপস্থিত। এমনকি নেই তেমন জৌলুসও।

এ বিষয়ে কথা হয় অন্বয় প্রকাশের সত্ত্বাধিকারী হুমায়ুন কবীর ঢালীর সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আসলে সাজসজ্জার ব্যাপারে বাংলা একাডেমির কোনো গাইডলাইন নেই। যে যার মতো করে স্টল ব্যবস্থাপনা করে থাকে। এটা শুধু এবছর নয়, প্রতিবছরই একই গাইডলাইনে চলেন প্রকাশকরা। তবে এবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের বিষয়টি আমরা আমাদের প্রকাশনায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।’

বাংলানামা’র স্বত্বাধিকারী কবীর আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে স্টলের সাজসজ্জায় খুব বেশি খরচ করতে পারিনি। তবে আমাদের প্রকাশনায় মুজিববর্ষ বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’

বইমেলার বাংলা একাডেমি অংশে গিয়ে দেখা যায়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সরকার দলীয় রাজনৈতিক সংগঠনের স্টলগুলোতে থিমের যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু অন্য কোনো স্টলে থিমের ছিঁটেফোটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া মূল অংশের ১০ থেকে ১২টি স্টল বাদে কেউই এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি।

এ বিষয়ে কথা হয় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘থিম অনুযায়ী মেলার স্টল সজ্জার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এই নির্দেশনা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। যার যার মতো স্টল সাজায়। বাংলা একাডেমি মেলার অন্যান্য সাজসজ্জার বিষয়টি দেখে। এবারও আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ৫০ বছর বিবেচনায় পাঁচটি স্তম্ভ তৈরি করেছি। এছাড়া অন্যান্য জায়গায়ও মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার বিষয়গুলো ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘আসলে থিম ফুটিয়ে তোলার কাজ করা যায় পারফর্মিং আর্টে। এমনকি লেখালেখিতে। আমরা আমাদের প্রকাশনায় বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার ৫০ বছরকে গুরত্ব দিয়েছি। শুধু আমরা নই, মেলার অন্যান্য প্রকাশকরাও সেরকম বিষয় নিয়ে কাজ করছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আর মেলার স্টলগুলোতে থিম অনুযায়ী সাজসজ্জার বিষয়টি প্রকাশকদের একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। এখানে আমাদের নির্দেশনা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

এর আগে, গত ১৮ মার্চ বিকেল ৩টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বইমেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা শুরু হলেও মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর বইমেলা হচ্ছে মার্চের ১৮ তারিখ থেকে। চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এর আগে ২০২১ সালের একুশে বইমেলা উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আয়োজন না করে অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলা একাডেমি। কিন্তু প্রকাশকদের বিরোধিতার কারণে তা আর হয়নি।

সারাবাংলা/পিটিএম

বইমেলা ২০২১ বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক মুজিববর্ষ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হাবীবুল্লাহ সিরাজী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর