শ্যামনগরে বাঁধ নির্মাণে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব
২১ মার্চ ২০২১ ০৮:৪৬
ঢাকা: বহুল আলোচিত সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সেখানকার ৩ হাজার ৪৪১ হেক্টর এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির প্রভাব কমিয়ে আনতে ১ হাজার ২৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পে বাস্তবায়িত হলে ওই এলাকায় উন্নত পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পটি নিয়ে আগামী বুধবার (২৪ মার্চ) অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। পিইসি সভার কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভৌত অবকাঠামো বিভাগের উপপ্রধান এ কে এম আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত কার্যপত্রে বলা হয়েছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থ বিভাগ হতে উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকূলে প্রাপ্ত মোট সিলিং ৬২ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা। মন্ত্রণালয় হতে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মোট চাহিদা ২০৯ কোটি ২৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। মোট গ্যাপ ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এই গ্যাপ পূরণ করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কিভাবে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির অর্থায়ন নিশ্চিত করবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের ব্যাখা প্রয়োজন। এছাড়া প্রকল্পে মেয়াদকাল ২০২১ সালের মার্চ হতে ২০২৩ সালের জুনে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
পিইসি সভার কার্যপত্রে আরও বলা হয়, ৫০ কোটি বা অধিক ব্যয়ের প্রকল্পের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করা প্রয়োজন। কিন্তু এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি। এজন্য পানিসম্পদ সেক্টরের অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে অথবা সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থা দিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হবে। এছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৭ দশমিক ৮২ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্বাসনসহ নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাবদ মোট ৫০৮ কোটি ৬৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এই কাজের যৌক্তিকতা এবং ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সভায় ব্যাখা করতে পারে। এক্ষেত্রে হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল স্টাডি এবং ব্যাথেমেট্রিক সার্ভের মাধ্যমে বিস্তারিত ডিজাইনের ভিত্তিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা প্রয়োজন।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে লবণাক্তার অনুপ্রবেশ রোধ, কৃষি জমি সম্প্রসারণ ও লবণাক্ততার কবল হতে প্রকল্প এলাকা রক্ষাকল্পে ১৯৭০ সালে উপকূলীয় বাধ নির্মাণের মাধ্যমে প্রকল্পটি পোল্ডারিং করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝড়-জলোচ্ছাসসহ সমুদ্রেপৃষ্ঠের উচ্চতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী খাল ভরাটের ফলে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে উপকূলীয় বাঁধগুলো মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পোল্ডারিংয়ের কার্যকারিতা প্রায় সম্পূর্ণ বিলোপ হচ্ছে। পোল্ডারটির তিন দিক খরস্রোতা খোলপেটুয়া নদ ও কপোতাক্ষ নদ দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং দক্ষিণ পাশে খোলপেটুয়া নদীর অপর পাশে সুন্দরবন অবস্থিত। প্রতিনিয়ত জোয়ারভাটা, বাতাসের সৃষ্ট ঢেউয়ের আঘাত এবং মৌসুমী নিম্নচাপের আঘাতে পোল্ডারটির অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতি হয়। সর্বশেষ ২০০৯ আইলার পোল্ডারটি মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তিনটি স্থান ব্রিচ হয়ে যায় এবং অন্যান্য বাঁধগুলো দুর্বল হয়ে যায়।
প্রকল্পে প্রস্তাবিত মূল কার্যক্রম হলো- ৮১ দশমিক ১২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, ১ দশমিক ৬০ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্বাসন, ২১ দশমিক ৮১ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ৭ দশমিক ৮১৯ কিলোমিটার নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ, পাঁচটি রেগুলেটর পুনর্বাসন, ১১টি আরসিসি বক্স ইনলেট এবং ২২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল পুনঃখনন করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/এএম