Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাধীনতার ৫০-এ নতুন প্রজন্মের ইতিহাসবোধ নির্মাণে আসছে পরিকল্পনা

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ মার্চ ২০২১ ১৯:০৫

ঢাকা: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে দেশ। দীর্ঘ নয়মাসের যুদ্ধ আর জাতির চূড়ান্ত বিজয়ের দুর্লভ মুহূর্তগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসবোধ নির্মাণে তুলে ধরার প্রত্যয়ে আসছে পরিকল্পনা। এজন্য ৫০ বছরের পূর্তির দিবসটিতে প্রাসঙ্গিকতায় যুক্ত হয়েছে নানা তাৎপর্য।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এবং বাঙালি জাতীয়তাবোধে দেশ পরিচালিত হওয়ার লক্ষ্যেই স্বাধীনতা যুদ্ধ। সেখান থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের কোথাও কোথাও বড় বিচ্যুতি রয়েছে। এবার সেসব কাটিয়ে ওঠার প্রত্যয় আমাদের। স্বাধীনতার সুফল দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ব্যাপক উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকার। যা অর্থবহভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানাতে কাজ করবে।

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়া দীর্ঘ ত্রিশ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্ত বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলার জন্য তারা কোনো পরিকল্পনা নেননি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য কোনো উদ্যোগ নেননি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের যথাযথ ইতিহাস সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। শিশু কিশোরদের কাছে এ ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছি।’

এ প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব কিছুটা উদ্ধার করেছে বর্তমান সরকার। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, সংবিধানের যে চার মূল নীতি এটাকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারিনি। আমাদের সমাজে, জীবনে, প্রশাসনে, সরকারে সংবিধানের চার মূলনীতি ফিরে এসেছে কিন্তু তার প্রতিফলন দেখতে পাই না।’

উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘আজ স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক দেওয়া হয় স্বাধীনতা বিরোধীদের। স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয় শর্শিনা পীরের মতো লোককে। তিনি পাকিস্তানের কত বড় সহযোগী ছিলেন তা আমার বইয়ে লেখা আছে। শহিদ মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী লিলি চৌধুরী স্বাধীনতা পদক পায়নি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় তাকে দিয়ে টেলিভিশনে নাটক শুরু হয়। যখন মুসলমান মেয়েদের মঞ্চে নামার কথা নয়, তখন মেয়েরা নাটক করবে তা কেউ ভাবতে পারতেন না। তিনি পদক পাবেন না, পাবেন শর্শিনা পীর আর আব্দুল হামিদের মতো মানুষেরা। এটা ভীষণ কষ্টের।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই স্বাধীনতার সুফল দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে যাক। কেবলমাত্র একটা পতাকা কিংবা একটা ভূখণ্ড কিংবা জাতীয় সঙ্গীতের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। বঙ্গবন্ধু আমাদের উদ্ভুদ্ধ করেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য। যাতে মানুষ খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে। যতদিন পর্যন্ত মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত না হবে ততদিন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ অর্থবহ হবে না। অর্থনৈতিক মুক্তি, সাংস্কৃতিক মুক্তি আমাদের কথা বলার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হলেই স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এর সুফল যেন দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। আমাদের অসমাপ্ত কাজ পরবর্তী প্রজন্ম যেন জনমানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে স্বাধীনতার মূল্যবোধ, চেতনা ও লক্ষ্য যেন বাস্তবায়ন করতে পারে।’

একই কথা বলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর। তার কথায়, ‘স্বাধীনতার চেতনা কীভাবে ফিরে পাওয়া যাবে সেদিকে নজর দিতে হবে। অর্জন আমাদের অনেক। বাংলাদেশটাই তো একটা অর্জন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তো নিছক একটা পতাকা বদল কিংবা ভূখণ্ড প্রাপ্তি বা জাতীয় সংগীত নয়। আমাদের আদর্শ ছিল, লক্ষ্য ছিল- যা প্রতিফলিত হয়েছে বাহাত্তরের সংবিধানে। যে সংবিধানকে বঙ্গবন্ধু বলেছেন ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তে গাথা সংবিধান।’

শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের দায়িত্ব হলো স্বাধীনতাকে রক্ষা করা। আমরা সেটা রক্ষা করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা এখন ক্ষমতায়। তিনিই পারবেন। আমাদের নাগরিক সমাজের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন সবক্ষেত্রে করতে হবে। সংবিধানে থাকলেই চলবে না।’

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

টপ নিউজ পরিকল্পনা সুবর্ণজয়ন্তী স্বাধীনতা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর