‘নারীবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে আরও নারী পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হবে’
২২ মার্চ ২০২১ ২১:৩২
ঢাকা: বাংলাদেশ পুলিশে নারীবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে আরও বেশি নারী পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিপিডব্লিউএনের উদ্দেশে তিনি বলেন, স্কুলে স্কুলে গিয়ে মেয়েদের উৎসাহিত করতে হবে, যেন তারা পুলিশে যোগ দিতে আগ্রহী হয়। বাংলাদেশ পুলিশে আরও বেশি নারী পুলিশ নেওয়ার মাধ্যমে পুলিশের নারীবান্ধব সেবা প্রদানের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান ও কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন। ‘Gender Responsive Policing: An Approach of Bangladesh Police and Role of Bangladesh Police Women Network’ শীর্ষক আয়োজনটি করে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন), সহযোগিতায় ছিল ইউএনডিপি।
বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আইজিপি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে যাদের জন্ম হয়েছে তারা জানবে না, একসময় দারিদ্র্য ও ক্ষুধা ছিল এ দেশের সাধারণ মানুষের নিত্যসঙ্গী। বিশ্ব মোড়লেরা বলত, এমন দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারবে না। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্ব মোড়লদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে নিজের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে বাংলাদেশ। গত ৫০ বছরে সারাবিশ্বে মাত্র পাঁচটি দেশ দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পেরেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলা তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে বলে মন্তব্য করেন আইজিপি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিশেষ করে গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া ছিল বিস্ময়কর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের এ উন্নয়নের একটি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং কর্মক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান হারে নারীর অংশগ্রহণ। আর এটি সম্ভব হয়েছে বিগত দিনগুলোতে শিক্ষা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের ফলে। এর মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সবার জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলগুলোতে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছেলেদের চেয়ে বেশি, যা শিক্ষিত ও কর্মক্ষম নারী গোষ্ঠী বিনির্মাণে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
আইজিপি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী উদ্যোগের ফলে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশে প্রথম ছয় জন নারী পুলিশ সদস্য যোগ দেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। এ সংখ্যা আমাদের মোট পুলিশ জনবলের শতকরা ৭ দশমিক ৫০ ভাগ, যা আনুপাতিক হারে জাপান পুলিশের নারী সদস্যদের সমান।
বিপিডব্লিউএনের উদ্দেশে ড. বেনজীর আরও বলেন, নির্যাতনের শিকার নারীদের আরও বেশি মানসম্মত ও প্রয়োজনীয় সেবা দিতে প্রচলিত সেবাদানের পাশাপাশি ভিকটিমকে মানসিক কাউন্সিলিং, ট্রমা ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক পুনর্বাসনের জন্য কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) ড. মো. মঈনুর রহমান, বিপিডব্লিউএনের সভাপতি ও বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি আমেনা বেগমসহ বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ইউএনডিপি’র পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ভ্যান নুয়েন, কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সুকো ইসিকাওয়া, ইউএন উইমেন ও বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব শায়লা ফারজানা। অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে আগত বিপিডব্লিউএন প্রতিনিধিরা সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সব জেলার পুলিশ সুপারসহ জেলা ও মেট্টোপলিটনগুলোর বিপিডব্লিউএনের প্রতিনিধিরা অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর