‘বাংলাদেশের অগ্রগতিই বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন’
২২ মার্চ ২০২১ ২২:২৯
ঢাকা: গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব উন্নতি করছে, সেটিকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের সঙ্গে তুলনা করেছেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন অসাধারণ বক্তা, কুশলী সংগঠক ও যোদ্ধা। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম তিনিই এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আজ বাংলাদেশ যেভাবে বিশ্বের বুকে এগিয়ে যাচ্ছে, এটিই বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন।
সোমবার (২২ মার্চ) জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১০ দিনের এই আয়োজনের এটি ছিল ষষ্ঠ দিন। এদিনের আয়োজনের থিম ছিল ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে নেপালের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি জানান, রাষ্ট্রপতি হিসেবে এটি বাংলাদেশে তার প্রথম সফর। তবে এর আগেও ব্যক্তিগতভাবে তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন। দুই সফরের মধ্যেকার সময়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে যে অগ্রগতি করেছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক শক্তিশালী করার বিভিন্ন দিকও তিনি তুলে ধরেছেন।
বিদ্যা দেবী বলেন, এবারের সফরে আমি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জনগণের জীবনযাত্রার মানে ব্যাপক অগ্রগতি দেখছি। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অনেক মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করেছে। এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ও এই দেশের জনগণের অগ্রগতিতে আমি ভীষণ খুশি।
বাংলাদেশের এই অগ্রগতির জন্য তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকুণ্ঠ প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, তিনি কেবল বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যাই নন, তিনি এই অঞ্চলের একজন যোগ্য নারী নেতা হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের পথে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন নেপালের প্রেসিডেন্ট। একইসঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাণিজ্য, কানেকটিভিটি, ট্রানজিট, জ্বালানি, পর্যটন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানুষের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা চলমান রয়েছে। বাণিজ্য বাধা দূরী করার পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন ও বাজার সুবিধা সম্প্রসারণ করা গেলে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া নেপালের জলবিদ্যুৎ ও বাংলাদেশের গ্যাস দুই দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও বাড়ানো জরুরি।
বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একজন সম্মানীয় নেতা বলে মন্তব্য করেন বিদ্যা দেবী ভান্ডারি। তিনি বলেন, অসামান্য বাগ্মিতা, কুশলী সাংগঠনিক দক্ষতা ও নেতৃত্ব গুণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাঙালির হৃদয় জয় করেছিলেন। তিনি নতুন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জয়ী হয়েছিলেন। তার অবিরাম সংগ্রামই বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। এই সংগ্রামের কারণে তাকে ১৯৬৯ সালে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছিল সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, যা গোটা জাতি তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নিয়েছিল।
নেপালের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বাংলা ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল বঙ্গবন্ধুর। এ কারণে জনগণকে নিয়ে বাংলা ভাষাকে রক্ষা ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। নিপীড়িত, বঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষের জন্য তিনি ছিলেন সহমর্মী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর ’সোনার বাংলা’র স্বপ্নের সঙ্গে নেপালের ‘সমৃদ্ধ নেপাল, সুখী নেপালি’ সংকল্পের মিল রয়েছে বলেও বক্তব্যে জানান প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি। দুই দেশ একযোগে কাজ করলে সেটি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।
এর আগে, মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সোমবার সকালে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে বিদ্যা দেবী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে পৌঁছান বিদ্যা দেবী। সেখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা তাকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ‘মুজিব চিরন্তন’ স্মারক তুলে দেন নেপালের প্রেসিডেন্টের হাতে। আলোচনা পর্বে প্রবন্ধ পাঠ করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সম্মানিত অতিথি নেপালের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বক্তব্যের পর অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয় আলোচনা পর্ব।
এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্বে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন। পরে নেপালের শিল্পীদের পক্ষ থেকেও পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয়। আরও ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের পরিবেশনা, কাব্য, নৃত্য, সংগীত ও কোরিওগ্রাফির সঙ্গে গণসংগীত ও লোকসংগীত।
সারাবাংলা/টিআর
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড নেপালের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যা দেবী ভান্ডারি মুজিব শতবর্ষ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী