খুশির ঝলক প্যাভিলিয়নে, ক্ষতির আশঙ্কায় ছোট প্রকাশকরা
২২ মার্চ ২০২১ ২৩:৪১
ঢাকা: বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় এবার যেন প্যাভিলিয়নের আধিক্য বেশি। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কয়েক হাত পরপরই দৃশ্যমান এমন দৃষ্টিনন্দন প্যাভিলিয়ন। আর এসব প্যাভিলিয়ন ঘিরে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জটলাও বেশি। ওই অর্থে মেলা জমে না উঠলেও প্যাভিলিয়নে টুকিটাকি বেচাকেনা বাড়তে শুরু করেছে।
তবে প্যাভিলিয়নের তুলনায় বই বিক্রিতে পিছিয়ে ছোট ছোট প্রকাশকদের স্টল। করোনা পরিস্থিতির এই মেলায় প্যাভিলিয়নের ক্রেতারা খুশি হতে শুরু করলেও স্বল্প পুঁজির প্রকাশকরা জানাচ্ছেন ক্ষতির আশঙ্কার কথা। তারা বলছেন, এই মেলায় অংশ নিয়ে তারা হয়তো খুব একটা লাভবান হতে পারবেন না।
পাঞ্জেরী, আগামী, অবসর, তাম্রলিপির মতো প্রকাশকরা এবারের বইমেলায় প্যাভিলিয়ন নিয়ে উপস্থিত। সরেজমিনে দেখা যায়, এসব প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের ছোট ছোট জটলা।
মেলায় আজিমপুর থেকে আসা কলেজছাত্র রাজিব আহমেদ বলেন, ‘হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল কিংবা আনিসুল হকের লেখা দারুণ ভালো লাগে। তাদের বই কিনতে প্যাভিলিয়নে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘প্যাভিলিয়নে এলে একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়। সেখান থেকে বই বাছাই করে কিনতেও সুবিধা হয়।’
মেলায় যেভাবে বই বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে, তাতে খুশি আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বইমেলা শুরু হয়েছে, এটি আনন্দের বিষয়। তবে মনে হচ্ছে অন্যান্যবারের তুলনায় বেচাকেনা এবার কম হবে। বেচাকেনা যাই-ই হোক, আমরা আনন্দিত হতে চাই।’
তবে প্যাভিলিয়ন সংস্কৃতি মেলায় বৈষম্য তৈরি করছে উল্লেখ করে ভাষাচিত্রের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই প্যাভিলিয়ন কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে প্যাভিলিয়নে গহ্বরে ছোট ছোট প্রকাশকরা লোকসানের মুখোমুখি হবে।’
শীতের রোদ্দুর মেখে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে মেলা চত্বরে ঘোরাঘুরি, প্রকাশনা সংস্থার স্টলের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পরিচিত কারও সঙ্গে অনেক দিন পরে দেখা হয়ে যাওয়া কিংবা প্রিয় লেখককে পেলে তার বইয়ে একটি অটোগ্রাফ সংগ্রহের পর চোখে-মুখে খুশির ঝলক— অন্যান্যবারের বইমেলায় এটিই ছিল পরিচিত দৃশ্য। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দেড় মাস পিছিয়ে শুরু হওয়া এবারের বইমেলায় এসব দৃশ্যের দেখা কমই মিলছে। বরং চৈত্রের কড়া তাপে বইমেলায় আসা পাঠক-ক্রেতাদের অনেককেই ঘাম মুছতেই সময় ব্যয় করতে হচ্ছে বেশি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার কারণে ক্রেতা-পাঠকদের উপস্থিতি কম হওয়া।
সংশ্লিষ্টরা অবশ্য আশা করছেন, শুরুর দিকে খুব একটা না জমলেও সময় গড়ালে মেলা দম পাবে। তখন বিক্রেতাদের মুখে হাসিও ফুটবে। প্রকাশরাও বলছেন, বইমেলা শুরুর কয়েক দিন সবসময়ই বিক্রি কম হয়। শুরুতে দর্শনার্থীরা দেখেন, ঘোরেন, পছন্দ করে চলে যান। সপ্তাহখানেক যাওয়ার পর বই বিক্রি বাড়তে থাকে। আর বিক্রির চাপটা তৈরি হয় শেষ সপ্তাহে গিয়ে। এ বছর আগের বছরগুলোর মতো না হলেও বই বিক্রির এমন প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। কয়েকদিনের মধ্যে বইমেলায় প্রাণ আসবে— এমন আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন তারা।
তারপরও তুলনামূলকভাবে দর্শনার্থী কম থাকার পাশাপাশি স্টল বিন্যাস নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট প্রকাশক ও বিক্রেতাদের একাংশ। এ নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করেছেন ছোট-মাঝারি স্টলগুলোর প্রকাশকরা। তাদের অভিযোগ, প্যাভিলিয়নগুলো মেলার মাঝখানে রাখা হয়েছে। ফলে সাধারণ স্টলগুলো দূরে পড়ে গেছে। তাতে করে যারা মেলায় আসছেন, তাদের মনোযোগটা একচেটিয়াভাবে দখল করে নিচ্ছে প্যাভিলিয়নগুলো। দূরে পড়ে যাওয়া স্টলগুলো বইমেলায় আগতদের মনোযোগই কাড়তে পারছে না।
প্রকাশকদের এমন বক্তব্যের সঙ্গে অবশ্য সম্পূর্ণ একমত নয় বাংলা একাডেমি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণেই স্টলবিন্যাস আগের চেয়ে বেশি জায়গাজুড়ে করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। একইসঙ্গে মেলায় সবসময় যে স্থান সংকটের অভিযোগ ছিল, বেশি জায়গাজুড়ে মেলা বিস্তৃত করায় সে অভিযোগ খণ্ডনের প্রচেষ্টাও ছিল বলে মনে করছেন একাডেমি।
বইমেলা আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক কিছু বিবেচনা করেই এবার প্যাভিলিয়নগুলো দেওয়া হয়েছে। মেলার যে লেআউট, তা অনেকের পছন্দ হয়েছে। আবার কেউ কেউ অপছন্দ করছেন। তবে আমাদের ব্যাখ্যা হলো— মেলায় ঢুকতেই সাধারণ স্টলগুলো পাওয়া যাবে, এরপর আসবে প্যাভিলিয়ন। আবার ক্রেতা-দর্শনার্থী যখন মেলা থেকে বের হবেন, তখন সাধারণ স্টলগুলো ঘুরেই বের হবেন। সুতরাং এখানে বৈষম্যের কিছু নেই।’
সারাবাংলা/একে/টিআর