করোনা সংক্রমণের বছর পার করে নমুনা পরীক্ষায় রেকর্ড
২৩ মার্চ ২০২১ ১৯:২৭
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তে প্রথমবারের মতো নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি। তবে ৮ মার্চের আগে কেউ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হননি। ওই দিন নয়টি নমুনা পরীক্ষা করে তিন জনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর দেশে ১৯ হাজার ৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ২০২১ সালের ১৭ মার্চের আগে এটিই ছিল একদিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। ১৭ মার্চ দেশে ২৪ হাজার ২৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে ২৩ মার্চ দেশে ২৫ হাজার ৯৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে; যা বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। এদিন ৩ হাজার ৫৫৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি বোঝার জন্য অবশ্যই নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে হবে। আর এক্ষেত্রে যাদেরই উপসর্গ আছে তাদের সবাইকে নমুনা পরীক্ষার আওতায় আনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে বাংলাদেশে প্রচুর উপসর্গহীন কেস থাকার কারণে চ্যালেঞ্জটাও বাড়ছে।
এক নজরে বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষা
দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তে প্রথমবারের মতো নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি। তবে ৮ মার্চের আগে কেউ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হননি। ওই দিন নয়টি নমুনা পরীক্ষা করে তিন জনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা ১০০ অতিক্রম করে ২৬ মার্চ। ওই দিন ১২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
দিনে হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা প্রথম করা হয় ১০ এপ্রিল থেকে। ওই দিন ১ হাজার ১৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। নমুনা পরীক্ষা বাড়তে বাড়তে একদিনে ৫ হাজার পরীক্ষার ঘর স্পর্শ করে ১ মে। ওইদিন ৫ হাজার ৫৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। একদিনে ১০ হাজার পরীক্ষার ঘরও স্পর্শ হয় ওই মাসেই। ২০ মে ১০ হাজার ২০৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
এরপর ১০ জুন পরীক্ষা করা হয় ১৬ হাজার ৬৫টি নমুনা। এই পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর একদিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৯ হাজার ৫৪টি। ২০২১ সালের ১৬ মার্চ দেশে প্রথম বারের মতো নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১৭ মার্চ ২৪ হাজার ২৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ২২ মার্চ ২৫ হাজারের ল্যান্ডমার্ক অতিক্রম করে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। এদিন মোট ২৫ হাজার ১১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যা বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরে ৩৮০ দিনে সর্বোচ্চ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তবে বাস্তবতা হলো— এখনো একটা বিশাল অংশ কিন্তু সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তকরণ পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তাই তাদের পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে উৎসাহী করতে হবে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসা সেবা বাড়াতে হবে, আইসোলেশন ও কোয়ারেনটাইনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, নমুনা পরীক্ষায় বাংলাদেশের সক্ষমতা পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে এখন যারাই নমুনা পরীক্ষা করাতে আসছে তাদের সবারই তো পরীক্ষা করা হচ্ছে।
উপসর্গ থাকলেই নমুনা পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকে গুরুত্ব দেন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হলেও মাস্ক পরা অব্যাহত রাখতে হবে। মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।’
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার দুই ডোজের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েই অনেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন। তাদের উদ্দেশে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ কিন্তু বলেনি যে ভ্যাকসিনের এক ডোজ দিলেই আর কারো মাঝে সংক্রমণ পাওয়া যাবে না। তাই অসুস্থ বোধ করলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটা জরুরি, নমুনা পরীক্ষাও জরুরি। যেন প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা শুরু করা যায়।’
জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে শনাক্তের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে পরিস্থিতি বুঝতে হলে অবশ্যই দেশে নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে হবে। আর তাই নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর বিষয়ে আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি। এটা এমন এক ধরনের সংক্রমণ যা আসলে শনাক্ত করে আইসোলেশনে রাখতে না পারলে নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রায় অসম্ভব বিষয়।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেছেন, ‘নমুনা পরীক্ষা করানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে আমাদের যারা টেকনোলজিস্ট ও নমুনা পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আছেন, তাদের সক্ষমতাও বেড়েছে। তাই আমরা সবাইকে আহবান জানাই উপসর্গ থাকলেই নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য। যাতে অন্তত তিনি নিজে নিরাপদে থাকেন ও পরিবার এবং সমাজকে নিরাপদে রাখতে পারেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে সবাইকে।’
সারাবাংলা/এসবি/এএম