‘বৈধ সরকারকে উৎখাত করতেই শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল’
২৩ মার্চ ২০২১ ১৬:৫৮
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে জঙ্গিরা ২০ বার হত্যার চেষ্টা করেছে। ২০০০ সালের জুলাইয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তার সমাবেশস্থলে বোমা পুঁতে রেখে তাকে প্রথমবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। বৈধ একটি সরকারকে উৎখাত করতেই তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন আদালত। প্রায় ২১ বছর আগের ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) ১৪ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এলে ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্নভাবে তাকে ২০ বার হত্যার চেষ্টা করে। ২০০০ সালের জুলাই মাসে হুজি’র কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তৎকালীন বৈধ সরকারকে উৎখাত করার জন্য শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে আসামিরা।
আরও পড়ুন- কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে বোমা, ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড
এ মামলার প্রধান আসামি ছিলেন মুফতি আব্দুল হান্নান। তবে তার অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এজন্য তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মুফতি হান্নানের আদালতে দেওয়া জবানবন্দি তুলে ধরে বিচারক বলেন, ২০০০ সালে জুলাই মাসে হুজির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বৈধ সরকারকে উৎখাত করার জন্য শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র নেয় তারা। ওই বছরের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সমাবেশস্থল ও হেলিপ্যাডের কাছে ৭৬ কেজি ও ৪০ কেজি ওজনের শক্তিশালী দু’টি বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। সমাবেশের আগে চায়ের দোকানে রাখা বোমা পুলিশ উদ্ধার করে।
বিচারক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করে হুজি। এর মধ্যে প্রথম ঘটনাটি ঘটে কোটালীপাড়ায়, ২০০০ সালের ২০ জুলাই। দ্বিতীয় ঘটনা খুলনায়, পরের বছর ৩০ মে। ওই বছরেরই ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে তৃতীয় এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট চতুর্থবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এ কারণে হুজি ও জেএমবিসহ জঙ্গিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে উল্লেখিত নৃশংস ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব বলে ট্রাইব্যুনাল মনে করে।
বিচারক আরও বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত করেছে। এ কারণে তাদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো। একটি ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে তাদের প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, দেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে দিতে স্বাধীনতাবিরোধী মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল বলেও পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন বিচারক। তিনি বলেন, সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতাতেই পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর মাধ্যমে হত্যার মাধ্যমে তারা দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল।
কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন— আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস, সরোয়ার হোসেন মিয়া, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজ, মাহমুদ আজাহার ওরফে মামুনুর রশিদ ওরফে মাহমুদ, রাশেদুজ্জামান ওরফে শিমুল খান ওরফে রাশেদ খাঁ, তারেক হোসেন ওরফে তারেক ওরফে মারফত আলী, আ. ওয়াদুদ শেখ ওরফে গাজী খান ওরফে হাসান ওরফে মেহেদী হাসান, মাওলানা আমিরুল ইসলাম ওরফে জেন্নাত মুন্সি ওরফে দেনত আলী মুন্সি, মাওলানা রফিকুল, মো. আজিজুল হক ওরফে শাহনেওয়াজ, মো. লোকমান, মো. ইউসুফ ওরফে মোছহাব মোড়ল ওরফে আবু মোছা হারুন, মোছাহেব হাসান ওরফে রাশু এবং শেখ মো. এনামুল হক। আসামিদের মধ্যে প্রথম ৯ জন কারাগারে আছেন। শেষের পাঁচ জন পলাতক।
সিআইডি’র সাবেক এএসপি আব্দুল কাহার আকন্দ ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৫০ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
সারাবাংলা/এআই/টিআর