চট্টগ্রামে ৩ মাসে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
২৩ মার্চ ২০২১ ২০:৩৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছেই। তিন মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ২৭২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। সাম্প্রতিক সময়ের সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনায় আক্রান্ত রোগীও বাড়ছে।
জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৯৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৭২ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ২৩৪ জন। মৃত্যুর কোনো ঘটনা না থাকলেও সংক্রমণ হার প্রায় ১৪ শতাংশ।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বরের পর চট্টগ্রামে এটা সর্বোচ্চ সংক্রমণ। তখন ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছিল ২৮৫ জন। আর গত বছরের জুলাই মাসের পর গত আটমাসে চট্টগ্রামে শনাক্তের হার এটাই সর্বোচ্চ।
গত বছরের মে-জুন মাসে চট্টগ্রাম জেলায় করোনা শনাক্তের হার ছিল নমুনা পরীক্ষার প্রায় ২৮-৩০ শতাংশ। জুলাই মাসের শুরুতে ছিল ১৯-২২ শতাংশ। জুলাইয়ের শেষ দিকে এই হার ছিল ১১-১২ শতাংশ। আগস্ট মাসের শুরুতে শনাক্তের হার কিছুটা বেশি থাকলেও মাসের শেষে ১০ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে সাড়ে পাঁচ থেকে সাত শতাংশের মধ্যে ছিল এই হার। অক্টোবর মাসের শুরুতে তা আবার বেড়ে সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় শতাংশে দাঁড়ায়। মধ্য নভেম্বরে তা বেড়ে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হয়। এরপর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সংক্রমণের হার কম ছিল। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে তা আবার বেড়ে ৬-৮ শতাংশের মধ্যে আসে। মার্চে বেড়ে গিয়ে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ শনাক্ত হল।
তবে বিদেশগামী বাদ দিলে সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের হার প্রকৃতপক্ষে বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়তে শুরু করেছে। সূত্রমতে, মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিআইটিআইডিতে রোগী আছে ১২ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আছে ১০৪ জন। এর মধ্যে চারজন ছিল নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে মঙ্গলবার সাধারণ শয্যায় ৪৬ জন এবং আইসিইউতে রোগী আছে ১০ জন।
জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট মো. আবদুর রব সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালে আগের চেয়ে করোনা রোগী বেড়েছে। ব্যক্তিগত চেম্বারেও রোগী বেড়েছে। যত রোগী আসছে, তার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই করোনার রোগী। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি দেখা যাচ্ছে।’
বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর ডা. আরিফ বাচ্চু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটাকে আমরা করোনার সেকেন্ড ওয়েভ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি, যেটা জুন-জুলাইয়ে পিক লেভেলে যাবে বলে আমাদের ধারণা। এটা কিন্তু সহজে যাবে বলে মনে হচ্ছে না, এবং এটা প্রথম ওয়েভের চেয়ে আরও ক্ষতিকর। স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতালে ভর্তির মাত্রা বেশি। আইসিইউ-এইচডিইউ অলরেডি ৮০ শতাংশ পূর্ণ হয়ে গেছে। সুতরাং এটা যখন আরও পিক লেভেলে যাবে তখন হাসপাতালে শয্যাসংকট দেখা দেবে। মানুষের কাছে এখন করোনার প্রকৃত চিত্রটা তুলে ধরা উচিৎ যে, এটা আগের চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। সংক্রমণের হার যত বাড়বে মৃত্যুহারও বাড়বে।’
সারাবাংলা/আরডি/এমআই