ঢাকা: দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেইটওয়ে তথা মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি হাবে রূপান্তরিত হতে চায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল এবং ভুটান এই দেশ দুটি ল্যান্ডলক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুই দেশের মাঝেই রয়েছে ভারত। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন যে, ভারত রাজি না হলে এই কানেকটিভিটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে বুধবার (২৪ মার্চ) আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘নেপাল এবং ভুটান ল্যান্ডলক কান্ট্রি। বাংলাদেশর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই দুই দেশের মাঝে ভারত আছে। সুতরাং ভারতের সম্মতি না হলে এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সেজন্য নেপাল এবং ভুটান আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। এই দেশ দুটি মনে করে যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর খুব ভালো সম্পর্ক আছে। তাই তারা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছে এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলার জন্য।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কানেকটিভিটির ওপর জোর দিয়েছি। ভুটানের সঙ্গে কানেকটিভিটি শুধু বিমান পথেই নয়, বিমান-নৌ এবং সড়কসহ সকল ক্ষেত্রেই কানেকটিভিটি সুদৃঢ় করতে চাই। ভুটানের সঙ্গে সরাসরি আকাশ ও সমুদ্রপথে কানেকটিভিটি স্থাপন হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে রেলপথে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটে আবারও রেল যোগাযোগ পুরোদমে (এখন কার্গো যোগাযোগ আছে, সামনে যাত্রী পরিবহন) চালু হবে।’
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আজ (২৪ মার্চ) চিলাহাটি থেকে ভুটান সরাসরি রেলপথে যোগাযোগ চালুর বিষয়ে আলাপ হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি আলাপ করবেন। যদি ভারত সম্মত হয়, তবে চিলাহাটি থেকে ভুটান পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হবে।’
বাংলাদেশ-ভুটান দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক সম্পর্কে পরররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উভয় নেতা দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করেন এবং দেশ দুটির বিভিন্ন সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পারিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ, জল-বিদ্যুৎ, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, সংস্কৃতি এবং দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি মোকাবিলায় ওষুধ পাঠানোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এ সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। গত ৬ ডিসেম্বর অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সই হওয়ায় উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন, দু’দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে এ চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। বাংলাদেশ স্বল্পতম ব্যয়ে ‘ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ’ ভুটানে সরবরাহের ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে ভুটান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা কাজ করছে।”
বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে জল-বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে জানান আব্দুল মোমেন।